শব্দকবিতা

খলিল মাহমুদ's picture
খলিল মাহমুদ শনি, ২০১২-০৯-২৯ ০৭:৩০

গাঙচিল লালপাল কাশবন নদী
দুপুরের বালুচর বাঁশপাতা ঘুড়ি
কলাপাতা নিজ্‌ঝুম গরমের ঘুম
রাখালের বাঁশিমন উচাটন দিন
ঝড়খড় বাউলের একতারা ঝিম
সুনসান ইতিহাস সময় কলস।

*২১ আগস্ট ২০০৮

শব্দকবিতা- শব্দেই দৃশ্যানুভূতি।

২০০৮ বা ২০০৯-এর দিকে শব্দকবিতার উপর প্রথম লিখি এই ব্লগে। উদাহরণ স্বরূপ উপরের লেখাটা পোস্ট করি। ঝর্ণাদিদি, আশিক ভাই, অন্তরদিদি, সিদ্ধার্থদা, রাকা দা, অর্ঘ্য দা, প্রমুখ কবি বন্ধুরা এটির উপর আলোকপাত করেন এবং 'শব্দকবিতা'ও যে এক ধরনের কবিতা হতে পারে, সে ব্যাপারে তাঁরা পজিটিভ মনোভাব ব্যক্ত করেন। এরপর এই ব্লগের বিভিন্ন আলোচনায় উত্তরাধুনিক কবিতার (নতুন ধারা বা নতুন কবিতা) পাশাপাশি আমি শব্দকবিতার ধারনা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। বেশিরভাগই সাধুবাদ জানিয়েছেন, তবে কেউ কেউ বলেছিলেন শব্দকবিতা মূলত কোনো নতুন ধারা নয়, ইংরেজিতে এ ধারার কবিতা অনেক আগে থেকেই লিখিত হয়ে আসছিল। তাঁদের দেয়া লিংক অনুযায়ী আমি সেগুলো পড়ে বুঝবার চেষ্টা করেছি, এবং তাঁরা যে ঠিক বলেছিলেন সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিৎ।

আধুনিক কবিতার অর্থ ও শব্দকবিতা

একটা কবিতা লিখে বহুবার রিভিশন দিয়ে ওটাকে রিফাইন করা হয়। ফলে একটা অপেক্ষাকৃত অপরিপক্ব কবিতা কিছুটা হলেও পরিপক্বতা লাভ করে। কবিতা লিখার এটাই বোধ হয় চিরন্তন ও প্রায়-সর্বজনসিদ্ধ ও অনুসৃত পদ্ধতি।

সাম্প্রতিককালে মণীষী-কবিদের কবিতাবিষয়ক জ্ঞানগর্ব আলোচনা ও বিদগ্ধ পাঠকবর্গের সুনিপুণ কাব্য-সমালোচনা পড়ার পর এ বিষয়ে আমার জ্ঞানভাণ্ডার অনেকগুণ সমৃদ্ধ হয়েছে। প্রথমেই যেটা বুঝতে পেরেছি তা হলো : একটা কবিতা লিখে ছেড়ে দিলেই কবি হিসেবে আমার দায়িত্ব প্রায় শেষ; ও-কবিতার গূঢ়ার্থ বা শাব্দিক কিংবা আক্ষরিক অর্থ উদ্ধারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পাঠকের। কবিতার অর্থ উদ্ধারে পাঠকের যতো কষ্ট ও ভোগান্তি হবে, কবি হিসেবে আমার কৃতিত্ব বা বড়ত্ব ততোই বেশি। ভুলক্রমে অথবা ছাপাখানার বিড়ম্বনায় কোনো শব্দ বা বাক্য উলটপালট হয়ে গেলে কবিতার যে অর্থ-বিভ্রাট ঘটে, পাঠক তাতে জটিল সৃজনীশক্তির কাছে পরাস্ত হয়ে আমাকে কুর্ণিশ করবেন বৈকি!

কবিতা যদি পানির মতো তরল ও স্বচ্ছ হয়, তা সত্যিকারেই কোনো কবিতা হয় না বোধ হয়; আমাদের কিছু কবি তাই মনে করেন। জসীম উদ্‌দীনের কবিতা সেই বিবেচনায় ‘কবিতা’ কিনা তা এখন বিচার্য্য বিষয় বটে!

অতএব, কবিতা লিখা বোধ হয় নজরুল-রবীন্দ্র যুগের চেয়ে আজকাল অনেক অনেক সহজ হয়ে গেছে। কিছু সাবলীল ও কিছু অপ্রচলিত শব্দগুচ্ছ ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে পঙ্‌ক্তিবদ্ধ করে ছেড়ে দিলেই হলো; তার যদি একটা গূঢ়ার্থ থাকে তো ভালো, না থাকে তো আরো ভালো- বুদ্ধিমান পাঠক জটিল ও দুরূহ গাঁথুনির ভেতর ঢুকে অমূল্য রত্নখনি তুলে এনে সগর্বে কবির সামনে উপস্থাপন করবেন। কবি অতিশয় চমত্কৃত হলেও হতে পারেন- এতো সৃষ্টিশীল ও শিল্পোত্তীর্ণ কবিতা- এতো বাঙ্ময়, এতো বহুব্রীহিময়- কবি নিজেও হয়তো কবিতা রচনার কালে ভেবে উঠতে পারেন নি। প্রকৃতপক্ষে, কবিতার অন্তর্নিহিত অর্থোদ্ধারের দায়িত্ব পাঠকেরই, কবির নয়; পাঠকগণই গবেষণা করে বের করবেন রচিত কবিতার ‘মেসেজ’টা আসলে কী; সেই বাণী জ্ঞাত হয়ে কবি নিশ্চিত হতে পারেন- হ্যাঁ, আমি বোধ হয় এ-ই বলতে চেয়েছিলাম।

কবিকে কেবল একগুচ্ছ শব্দ সুগ্রন্থিত করতে হবে। তার অর্থ অথবা অর্থহীনতা অনুসন্ধানের দায়িত্ব পাঠকের। অর্থের ভেতর যেমন নানান অর্থ লুকায়িত, ‘অর্থহীনতা’ও অশ্রুতপূর্ব অর্থদ্যোতনায় ভাস্বর হয়ে উঠতে পারে।

সর্বোপরি এবং প্রায়শ, কবির চেয়ে পাঠকগণই কবিতা বিষয়ে অধিক জ্ঞান রাখেন।

বস্তুত কবিতার কোনো অর্থ হয় না। কবিতার সর্বজন-স্বীকৃত সারমর্মের অনুসন্ধানও যৌক্তিক নয়। কবিতার যদি কোনো অর্থ থেকেও থাকে, তা কেবল পাঠককল্পিত অর্থ, যা পাঠক ভেদে বহুবিধ। কবি অনেক সময় খামখেয়ালিভাবে কিছু একটা লিখে ছেড়ে দিতে পারেন; পাঠক সেটিকে রত্ন ভেবে এর বিরাট অর্থ তৈরি করে ফেলতে পারেন, যা পড়ে স্বয়ং কবিও আশ্চর্য বনে যেতে পারেন। অনেক সময় কবিতা লিখবার কালে যে প্রেক্ষাপট ছিল, (হয়তো কবি নিজেও তার একটা মর্মার্থ স্থির করেছিলেন), কবিতাটি প্রকাশিত হবআর পর ওটির একটি নতুন অর্থ তৈরি করবার প্রয়োজন পড়তে পারে।

আমি তাই বলি, একটা পুরো কবিতা লিখবারই বা কী দরকার? একটা একটা করে শব্দ একের পিঠে আরেক দাঁড় করিয়ে দিলে কেমন হয়? একটা ব্যাকরণগত সার্থক বাক্য না হোক, এরা পাশাপাশি বসে বা দাঁড়িয়ে কি কোনো ভাব বা আবহ সৃষ্টি করে? দৈবাৎ যদি একটা মাত্র শব্দও আপনাকে আমূল নাড়িয়ে দিয়ে যায়, যা একশ পঙক্তির একটা কবিতাও পারে নি, ওটিই আপনার সবচেয়ে শক্তিশালী কবিতা। এভাবে শব্দের পর শব্দ বসিয়ে দেখুন, আপনিও একটা অনবদ্য শব্দকবিতার স্রষ্টা- আমি এর নাম রেখেছি 'শব্দকবিতা’ : শব্দেই দৃশ্যানুভূতি।

আপনি রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছেন। একটা জারুলগাছ, একটা শুকনো নদী, মানুষ, কিছু বাড়ি.... প্রতিটা আলাদা আলাদা বস্তু বা এলিমেন্ট। এগুলোকে বাক্যবন্দি না করেও সুন্দর একটা ছবিবন্দি কি করা যায়... তা-ই শব্দকবিতা। কিছু শব্দ, এমনকি একটা শব্দও আপনার ভাবনাকে আমূল নাড়িয়ে দিতে পারে, এরূপ একগুচ্ছ শব্দ, সুচয়নকৃত, সুসজ্জিত... একটা সুগভীর ভাবাবহের সৃষ্টি যদি করে, তা-ই শব্দকবিতা। শব্দকবিতায় একটা বাক্য ব্যাকররণগত ভাবে শুদ্ধ হবার প্রয়োজন নেই (কবিরা যেভাবে লিখেন, সেটাই কবিতার ব্যাকরণ; আমি প্রচলিত কবিতার ব্যাকরণের কথা বলছি না)।

'শব্দকবিতা' শব্দটা এবং 'শব্দেই দৃশ্যানুভূতি' আমার ধারনাপ্রসূত। এটা কোনো সাড়াজাগানো আন্দোলন নয়। কাউকে লেখার জন্য অনুপ্রাণিতও করা হচ্ছে না। শুধু নিজের ভেতর একটা তাগিদ অনুভব করছি, নিজের গণ্ডি থেকেই বেরিয়ে পড়ার।

শব্দকবিতার সংক্ষিপ্ত ধারনা

কবিতার একটা নির্দিষ্ট অর্থ থাকতেই যে হবে, তা নয়; শব্দাবলি বা শব্দগুচ্ছ একটা ব্যাকরণসিদ্ধ বাক্য গঠন করবেই, তা-ও নয়। একটা শব্দ আপনার ভেতর বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে; একটা শব্দ আপনাকে আমূল নাড়িয়ে দিতে পারে; একটা লেখা পড়তে পড়তে আপনি দারুণ উজ্জীবিত হয়ে উঠলেন (এটা নতুন কিছু নয়), কিন্তু সঠিক ভাবটা আসছে না; তখন একটা কাজ করুন, প্রাণসঞ্জীবনী শব্দগুলো এলোপাথাড়ি লিখে ফেলুন, এবার আরেকটু গোছানোর চেষ্টা করুন।

আগ্রহীরা এ লিংকটই পড়তে পারেন : উত্তরাধুনিক কবিতার বৈশিষ্ট্য : একটা মনোজ্ঞ বিতর্কালোচনা

__________________

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

অনাহুত's picture
হুম। পড়ে যা বুঝলাম- কবিরা

অনাহুত 12 বছর 10 সপ্তাহ আগে

হুম। পড়ে যা বুঝলাম- কবিরা কবিতার ভাবার্থের কথা চিন্তা করে কবিতা লিখেন না। আমারতো মনেহয় প্রত্যেকটা কবিতারই একটা থীম থাকে। থীম ছাড়া কি কবিতা লেখা যায়? আমি আপনার উপরের কবিতার থীম ধরতে পারিনি। তবে শব্দের গাঁথুনী ভাল লেগেছে।

শব্দকবিতা ভালই লাগবে। কিছু শব্দকবিতা পোষ্ট করুন। স্বাদ নেই।

.....

দ্বিতীয় ধ্বণি অনাহুত হয়ে গেছে...
এফবি

সমর's picture
ভাল লাগল

সমর 12 বছর 10 সপ্তাহ আগে

ভাল লাগল

Faiz Kabir's picture
শব্দ কবিতা

Faiz Kabir 12 বছর 10 সপ্তাহ আগে

শব্দ কবিতা বলে যা বলা হল তাতো নতুন কিছু নয়। এটা ইতিমধ্যে পুরনো একটা বিষয়। ১৯৯০ সাল বা তারো আগে থেকে সেটা আছে। কৌরব ওয়েব সাইটে গেলে সব জানা যায়। প্রশ্ন হলো এই পথে পথচলা কতটুকু প্রয়োজন। গানের ক্ষেত্রে জ্যাজ এসে যে অন্য সব গানকে তাড়িয়ে দিয়েছে তা নয়। কবিতায় ভাবের অভিনবত্ব যদি তৈরি না করা যায় তাহলে শব্দ কবিতা শব্দ প্রতারনা হয়ে যেতে পারে। এ বিষয়টা খেয়াল রাখা জরুরী। কবিতা অনেক ভাবেই লেখা হবে। একটা বাগানে হরেক রকম ফুল যেমন থাকে, তেমনি কবিতাও নানা ভাবে থাকবে। তবে কোনটা কে কি ভাবে নিবে তা চাপিয়ে দেয়া যায় না। এই কথাটাও মনে রাখতে হবে। যেমন মনে রাখতে হবে যে সব কবিতা পাঠকই কবি নন।

মনসিজ's picture
নতুন প্রচেষ্টাকে স্বাগতম

মনসিজ 12 বছর 10 সপ্তাহ আগে

নতুন প্রচেষ্টাকে স্বাগতম জানাই

ঋভু's picture
মনে হয় ক্রিয়াপদ কর্তিত

ঋভু 12 বছর 10 সপ্তাহ আগে

মনে হয় ক্রিয়াপদ কর্তিত হয়েছে
সে যাই হোক অনুভূতি, যে অনুভূতিটা পৌঁছে যায় সেটাই আসল

ডুনি's picture
খাসা

ডুনি 12 বছর 10 সপ্তাহ আগে

খাসা Smile

গোলওয়ালা's picture
মূল কবিতাটি খুব সংক্ষিপ্ত বলে

গোলওয়ালা 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

মূল কবিতাটি খুব সংক্ষিপ্ত বলে মনে হল
যেন আরো কিছুটা হলে আরো তার রূপ খুলত

তপতী's picture
ভাল লাগল খলিলদা

তপতী 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

ভাল লাগল খলিলদা

ঝর্না's picture
এত পুরনো একটা লেখা দেখে চমকে

ঝর্না 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

এত পুরনো একটা লেখা দেখে চমকে উঠলাম খলিলভাই। ভালোলাগল ফিরে পেয়ে।

মুনীব রেজওয়ান's picture
কবিতা

মুনীব রেজওয়ান 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

কবিতা কি জিনিষ? কবিতার সঠিক সংজ্ঞা কি কেউ দিতে পেরেছেন? এক একজন একেক ভাবে কবিতার আদল তৈরী করে গেছেন। এইযুগে এসে কবিতা --অকবিতা সব একাকার হয়ে গেছে। কারন কি? পাঠকের বৈচিত্র পিয়াসী মন আজকাল অলিক অনেক কিছুকেই ভালবাসে। "কোলাবেরি কোলাবেরি ডিস"---এর মত আজাইরা কিছুও খুব জনপ্রিয় হয়ে যায়।
তো?------
আজকাল আমার মনে হয় গাঁজাখোর কবি এবং পাঠকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আকাশ পথে রেলগাড়ী চলতে দেখলেই তাদের ভাল লাগে।

আমি কবিতার সংজ্ঞা জানিনা---শুধু এটুকু বুঝি--কবিতা-অকবিতার পার্থক্যটা সবাইকে তুলে ধরা উচিত যদি এটিকে সত্যি কেউ আলাদা করতে পারেন। তাহলেই আমরা অনগ্রসর পাঠকরা বেঁচে যাই।

আপনার শব্দ সাজানোটা খুব ভাল লেগেছে খলিল ভাই।
আলোচনাও উপভোগ করেছি। অনেক শুভেচ্ছা।

.....

মুনীব রেজওয়ান

খলিল মাহমুদ's picture
ধন্যবাদ দ্বিতীয় ধ্বনি

খলিল মাহমুদ 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

আমারতো মনেহয় প্রত্যেকটা কবিতারই একটা থীম থাকে।..... এ ব্যাপারে আমি দুইশত ভাগ একমত। তবে কবিতার অর্থ, থিম, মূল বক্তব্য, ইত্যাদি নিয়ে কোনো এক সময় এ ব্লগে অনেক প্রাণবন্ত ও উপভোগ্য আলোচনা হতো। আমি অনেকের অনেক কবিতা পড়ে খুব ক্ষুব্ধ হতাম ও বিরক্তি প্রকাশ করতাম, ওসবে কোনো মূল বক্তব্য খুঁজে না পাওয়ায় Smile আমার মতামতকে সাপোর্ট করার জন্য যেমন কেউ কেউ ছিলেন, বিপক্ষে দাঁড়ি্যে অনেকে তলোয়ারেও অনেক শান দিয়েছিলেন - কবিতার আবার অর্থ কী? তুমি পড়ে যা বোঝো তা-ই কবিতার অর্থ। কেউ কেউ বলতেন, কবিতার কোনো অর্থ হয় না, কেবল পাঠকের কাছে কবির ভাবটা অনূদিত হয়ে পৌঁছে থাকে। টিএস ইলিয়টের একটা বিখ্যাত উক্তি আছে- কবিতা হলো সেই বস্তু যা বুঝবার আগেই হৃদয়কে স্পর্শ করে। এ থেকে বোঝা যায় কবিতার অর্থ থাকাটা জরুরি নয়।

কবিতা অনেক সময় সংকেতের মতো কাজ করে। কবিতা শুধু ভাবকেই ধারণ করতে সৃষ্ট, মনে হয় তা আজকাল চলবে না; কবিতা হলো শব্দ ভাঙা-গড়া-সাজানোর খেলা, শব্দের সর্বোত্তম বিন্যাস। পড়তে বা কানে শুনতে অপূর্ব, অর্থ খুঁজতে গেলে হয়তো দেখা যেতে পারে নিরেট মূল্যহীন একগুচ্ছ শব্দমাত্র।

আমার কবিতাটির আপাত কোনো থিম নেই। তবে 'শব্দকবিতার ধারনা' অংশটুকু পড়লে হয়তো বুঝবেন এ কবিতার একেকটা শব্দ একেকটা দৃশ্য বা আবহের আভাস দিচ্ছে, সব মিলিয়ে হয়তো বৃহত্তর একটা ভাবের আবেশ তৈরি করে ফেলতে পারে। যদি তা না হয়, তাহলে এটা কোনোরূপ থিম বা বক্তব্যবিহীন কবিতা। এতোটা নীরস না ভেবেই যদি দেখি, শব্দগুলো শুনতে তো মন্দ নয়! হয়তো তখন এর কিছুটা সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।

শুভ কামনা ধ্বনি।

খলিল মাহমুদ's picture
ধন্যবাদ

খলিল মাহমুদ 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

ধন্যবাদ সমর দা।

খলিল মাহমুদ's picture
আপনি ঠিকই বলেছেন

খলিল মাহমুদ 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

আপনি ঠিকই বলেছেন ফয়েজ কবির/কবীর ভাই (নামের বানান কি ঠিক আছে?), যদিও বাংলা ভাষায় শব্দকবিতার ব্যাপারে আমার জানাশোনা নেই, যা মূল টেক্সটে আমি বলেছি। তবে এইসব পথচলা কতোটুকু প্রয়োজন এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়- প্রয়োজন নেই, তবে কেউ কেউ প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, যার ফলে যুগে যুগে একেক ধারার কবিতার সাথে আমরা পরিচিত হতে পেরেছি। এ প্রয়োজন না থাকলে আমরা আদিকালের পয়ার বা পূথিতেই রয়ে যেতাম আজও। ভাবের ব্যাপারটা হলো কবির নিজস্ব- তাঁর প্রতিটা কবিতা যেমন অন্যান্য কবিতার ভাবপ্রবাহ থেকে ভিন্নতর, তাঁর সামগ্রিক কবিতাসম্ভারও অপরাপর কবিদের ভাবজগৎ থেকে ভিন্নতাময়। যদি বলেন- না, তাহলে বলবো, কবিতার ভাব কোনোদিনই পরিবর্তিত হয় না, আদিতে যা ছিল আজও তাই আছে- প্রেম, বীরত্বগাথা, ধর্ম, সংস্কার, নিত্যতা, ইত্যাদি থেকে কি আমরা বের হতে পেরেছি; বা এরা বাইরে কি অন্য কোনো ভাবজগৎ আছে? অন্য দিকে, মাইকেল, নজরুল- এঁরা যেমন ভিন্ন ভিন্ন টার্নিং পয়েন্টের স্রষ্টা, তদ্রূপ, জসীম উদ্‌দীন, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ-এঁদেরকেও কি বলা যায় না?

যাই হোক, কবিতা তার নিজের গতিতেই চলবে। আমরা যতো অভিধায়ই কবিতাকে ভিন্ন ভিন্নরূপে চিহ্নিত করি না কেন, কবিতা তার নিজস্ব বিভায়ই সাহিত্যকে আলোকিত করতে থাকবে- আজকের শব্দকবিতা, হাইকু, সনেট- ৪০০০ সালের সরহপাদের হাতে নতুন শরীর ও সৌন্দর্যে লিখিত হবে, এতে কোনো ভুল হবার সম্ভাবনা নেই।

ধন্যবাদ কবির ভাই মূল্যবান মতামতের জন্য।

খলিল মাহমুদ's picture
ধন্যবাদ

খলিল মাহমুদ 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

ধন্যবাদ মনসিজদা।

খলিল মাহমুদ's picture
ধন্যবাদ ঋতু

খলিল মাহমুদ 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

ক্রিয়াপদের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি মনে হয় কোনো প্রভাব ফেলে না।

এইখানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে- কোনো ক্রিয়াপদ নেই Sad

যে অনুভূতিটা পৌঁছে যায় সেটাই আসল - কথা এটাই।

অনেক ধন্যবাদ ঋতুদি/ঋতুদা।

খলিল মাহমুদ's picture
ধন্যবাদ ডুলি

খলিল মাহমুদ 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ডুলি।

খলিল মাহমুদ's picture
ঠিক বলেছেন গোলওয়ালা

খলিল মাহমুদ 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

একটা শব্দে যদি একটা কবিতা লিখা যেতো- এ নিয়ে অনেক ভেবেছি। এক শব্দের শিরোনামটাই একটা বিপুল কবিতা- মনে মনে খুঁজেছিও। সে হিসাবে আমার শব্দকবিতার আয়তন বেশ বড় Smile

অনেক ধন্যবাদ গোলওয়ালা, এ লেখাটা পড়ার জন্য।

খলিল মাহমুদ's picture
ধন্যবাদ তপতী দি

খলিল মাহমুদ 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

অনেক ধন্যবাদ তপতী দি, এটি পড়ার জন্য।

খলিল মাহমুদ's picture
ওহ্‌ ঝর্ণাদি, অনেকদিন পর দেখছি আপনাকে

খলিল মাহমুদ 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

কেমন আছেন ঝর্ণাদি? অনেকদিন পর দেখা হলো। নিয়মিত এ ব্লগে আসা হয় না এখন। হঠাৎ পরশু এসে ১ম পাতায় আপনার লেখা খুঁজেছি, পাই নি; আজ অবশ্য পেলাম।

খুব ভালো লাগলো আপু। শুভ কামনা।

খলিল মাহমুদ's picture
আপনাকে দেখে খুব ভালো লাগলো রেজওয়ান ভাই

খলিল মাহমুদ 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

রেজওয়ান ভাই, সালাম। অনেকদিন পর। কেমন আছেন? ফেইসবুকে বড্ড অনিয়মিত Sad আপনাকে এখানে দেখে ভালো লাগছে।

"আমি কবিতার সংজ্ঞা জানিনা---শুধু এটুকু বুঝি--কবিতা-অকবিতার পার্থক্যটা সবাইকে তুলে ধরা উচিত যদি এটিকে সত্যি কেউ আলাদা করতে পারেন। তাহলেই আমরা অনগ্রসর পাঠকরা বেঁচে যাই।"---- আপনার এ কথার সাথে পুরোপুরি একমত। কবিতার সংজ্ঞা এবং গতি-প্রকৃতি সত্যিই বিচিত্র। তাই কোনো এক লেখাকে আমি যেটাকে 'ডাস্ট' বলে নাক সিটকাই, ওটাই দেখা যায় অনেক পাঠকের কাছে তা খুব উঁচু মাপের কবিতা হিসাবে গণ্য হচ্ছে, এবং ভাইস-ভার্সা। জীবনানন্দ জীবদ্দশায় কবি-খ্যাতি সেভাবে পান নি, কারণ, তাঁর লেখাকে অনেকেই কবিতা বা ভালো কবিতা হিসাবে গণ্য করেন নি; সেই জীবন কি এখন আমাদের আধুনিক কবিতার প্রধান পুরুষ হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে না?

কবিতার সংজ্ঞা একেকে জনের কাছে একেক রকম; হয়তোবা কবিতার কোনো সংজ্ঞা হয়ই না। কিন্তু একটা লেখাকে পড়েই কিন্তু আমরা বলে দিতে পারছি- এটা একটা কবিতা, বা নিছক গদ্য। এই যে বলে দেয়া গেলো- মনে হয় এ দ্বারাই বোঝা যায় কবিতা কীরূপ হওয়া উচিত। তবে যদি কবিতাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়, হয়তো দেখা যাবে কোনো সংজ্ঞাই মনের মতো নয়, অথবা সব সংজ্ঞাই আলাদা আলাদাভাবে কবিতাকে বুঝবার জন্য যথেষ্ট।

কবিতার ব্যাপারে কিছু বলবার মতো জ্ঞান আমার নেই রেজওয়ান ভাই। যা বললাম তা চর্বিত চর্বন আর কী Smile

যাই হোক, মন্তব্যে খুব ভালো লাগলো। ভালো থাকুন রেজওয়ান ভাই।

Faiz Kabir's picture
১। http://www.kaurab.com আপনি

Faiz Kabir 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

১। http://www.kaurab.com আপনি এই ওয়েব সাইটে যান এবং শব্দ কবিতার কবে শুরু এবং কারা বাংলা ভাষায় এই ধরনের কবিতা কবে থেকে লিখছেন সেটার বিশদ ইতিবৃত্তান্ত পাবেন "পরিবিষয়ী কবিতা" সেকশনে।

২। কবিতার "ভাব" এর জায়গায় আপনি খেয়াল করে দেখুন আমি লিখেছি "ভাবের অভিনবত্ব"। এখানে আমি নতুন মৌলিক ভাবের কথাই বলেছি, পুরনো ভাবের পুনরাবৃত্তি নয়। অবশ্য পুরনো ভাব আসতে পারে নতুন আঙ্গিকে। নতুন হলে ভাল হয়।

৩। শব্দ কবিতার বদলে দৃশ্যকবিতাও বলা যায় যদি দৃশ্যায়নটা মুখ্য হয়।

৪। ঋভু একটা বিষয় ঠিক উল্লেখ করেছেন। ক্রিয়াপদ কর্তিত। আমি বলি ক্রিয়াবিহীন কবিতা। শব্দ কবিতায় ক্রিয়া সংক্রান্ত নির্দেশনা নেই। তবে ক্রিয়াবিহীন কবিতা শব্দ কবিতার একটা শাখা হতে পারে। এই মুক্তমঞ্ছে বেশ কিছু দিন আগে "এলোকেশ" নামে একটা পরিবিষয়ী/শব্দ কবিতা পোস্ট করেছিলাম। পরিবিষয়ী/শব্দ কবিতা আমি অনেক লিখেছি আমার মতো করে। মুক্ত মঞ্চে দেইনা কারণ এখানে যে আবহটা আছে আমি সেভাবেই থাকতে চাই।

এলোকেশ কবিতাটা নীচে দিলামঃ

এলোকেশ
ফয়েজ কবির
আলোড়ন কুহকের সন্দিগ্ধ পানকৌড়ি
নদীস্নান জটখোলায় শীতাতপ মন জপ ঈশ্বর
এক রক্তের কৌলিন্যে মার্বেল আকাশ
নানাবিধ আয়নাছবিতে তৈলচিত্র স্বয়ংক্রিয়
দূরভাষে নমিতরা কীর্তন শ্রবণ
শ্রাবণোন্মুখ।
জুলাই ৩১, ২০১২. Copyrights@ Faiz Kabir, Bronx, New York 2012

৫। আমার এক শব্দের একটা কবিতা আছে। সেটা লিখে রেখেছি ৩ মাস আগে এবং আগামী বই মেলায় প্রকাশিতব্য আমার কবিতার বইয়ের শেষ কবিতা হিসেবে থাকবে। মুক্ত মঞ্চে দেবনা যদিও।

Faiz Kabir's picture
@ মুনীব রেজওয়ান

Faiz Kabir 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

কবিতা-অকবিতার বিতন্ডায় গেলে আপনার লেখা বিঘ্নিত হবে। তার চে' বরং লিখে যান। কয়েক হাজার লিখুন তারপর ভাবুন কোথায় এসে দাঁড়িয়েছেন।

খলিল মাহমুদ's picture
ধন্যবাদ ফয়েজ ভাই

খলিল মাহমুদ 12 বছর 9 সপ্তাহ আগে

বিশদ বিশ্লেষণের জন্য অনেক ধন্যবাদ ফয়েজ ভাই।

শব্দকবিতার উপর সাধারণ প্রাথমিক ধারনা টেক্সটে আমি বর্ণনা করেছি। তবে ক্রিয়াপদ সংশ্লেষ/বিশ্লেষ বিষয়ে কোনো বৈশিষ্ট্যের কথা বলি নি। আমার আরো দু-একটা শব্দকবিতা আছে, সেটি পড়ে দেখলাম আমার অজ্ঞাতসারেই সেখানে ক্রিয়াপদের উপস্থিতি ঘটে গেছে, নগণ্য দু-একটি ছাড়া, যা ইচ্ছে করলেই এড়ানো সম্ভব। তবে ক্রিয়াপদ সংক্রান্ত ব্যাপারে রেস্ট্রিকশন রাখার বিপক্ষেই আমার মতামত। শব্দকবিতা, শব্দেই দৃশ্যানুভূতি। একটা ক্রিয়ারও এ বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। এজন্য যে-কোনো শব্দ বা পদই নির্বিঘ্নে এখানে বসে যেতে পারে।

নেট সমস্যার কারণে, এবং সময়াভাবে পরিবিষয়ী কবিতার বৃত্তান্ত দেখতে পারি নি, কিন্তু শীঘ্রই দেখবার ইচ্ছে আছে।

কবিতার আঙ্গিকে বৈচিত্র্য আনার মানসে কবিতাকে কিছুটা রসকষবিবর্জিত করার পক্ষপাতী আমি নই। কবিতা সবার জন্য নয়, তা ঠিক, কিন্তু কবিতার পাঠকের কাছেই যেন কোনো কবিতা কাঠের মতো শুকনো হয়ে না ওঠে, কবিতা রচনা-বিষয়ে সেটি খেয়াল রাখবার পক্ষে আমি। কবিতা শ্রুতি-মাধুর্যের প্রতীক, এজন্য একজন মূর্খ বা অশিক্ষিতও কোনো কোনো আবেগের মুহূর্তে দু কলি কবিতা বলে উঠতে পারে। কবিতা সুখপাঠ্য হবে, কবিতা উপভোগ্য হবে, সহজবোধ্য ও প্রাঞ্জল হওয়া বাঞ্ছনীয়, কিংবা, কবিতা এমন হতে হবে যা বুঝবার আগেই হৃদয়কে স্পর্শ করে। কবিতার পাঠকের সংখ্যা বাড়লে কবিদের জন্যই মঙ্গল। বেশি পাঠক, বেশি পরিচিতি। পরিচিতি লাভের আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরয়াত ক্ষুধা। পাঠক যেন কবিতার প্রতি ঝোঁকেন, সেই আবহ তৈরির দায়িত্ব কবিদেরই। আমি বলছি না যে শব্দকবিতা এসব উদ্দেশ্য সাধনে সাফল্য পেতে পারে, আমি সার্বজনীন কবিতার কথাই বলছি।

'এলোকেশ' সুন্দর কবিতা। ভালো লাগলো ফয়েজ ভাই।

উপরে একজনের মন্তব্যে এক-শব্দের কবিতার কথা লিখছিলাম। ভালো লাগছে যে এরকম কবিতার জনক স্বয়ং আপনিই। শব্দটার দৈর্ঘ্য আবার ১ পাতার সমান নয় তো? Smile

ভালো থাকুন ফয়েজ ভাই।



নতুন মন্তব্য পাঠান

  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <b> <font color> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <small>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • You may use [inline:xx] tags to display uploaded files or images inline.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.
  • You may use <swf file="song.mp3"> to display Flash files inline