তুমি না জানলেও, তোমাদের ছাদ জানে

১৬৪।
অসময়ের হলুদ ফুল রাস্তা পারাপার করে
উঁকি দিয়ে দেখি ধার নিয়েছে সে পাখনা
আরো জোরে উড়ে যাবে বলে
হলুদ ফুল – ওপাশে আছে সারি সারি কাপড়ের দোকান
টেবিলে অনায়সে ছুঁড়ে ফেলা সিল্কের শাড়ি
দেখে নাও কোনটা সপ্তমী বা নবমীর বিকেল
চশমার ফাঁক থেকে চোখ বলে এর তো শেষ নেই
চা খেতে না ডেকে হলুদ ফুলেরা সামনে দিয়ে যায়
গন্ধের রেশ রেখে কাঁচের এধারে
সন্ধ্যের দিকে বড় কাছাকাছি আসবে কারো নাভিমূল
আবির মাখানো গহ্বর থেকে কেউ পছন্দের কথা বলবে
টেবিলের এদিকে ছড়িয়ে থাকা একরাশ সুতি, জর্জেট, সিল্কের
মাঝ থেকে মাথা বের করে বলব আমি
এর যেকোনটাই তোমাকে মানিয়ে যাবে হলুদ ফুল
পেখমের রঙের সাথে মিলিয়ে ফুটপাথ দিয়ে
তখনি হেঁটে ফিরবে কেউ চায়ের কেটলি হাতে
আমরা ক্ষণিক বিশ্রাম চাইবো – রঙে মুড়ে থাকো তুমি
কিংবা ছেড়ে নাও হলুদের আবরণ
আজ শুধুই লিকার চা, যার রঙ তোমার ছড়ানো চুলের মত
১৬৫।
টেবিলে জমা বইয়ে কত হতাহতের গল্প থাকে
মানুষ কত সহজেই মরে যায় – ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়
শুধু আমরাই শব্দ খরচ করে চলি প্রকারভেদের ইচ্ছেয়
বিচ্ছেদ ডেকে আনা ভাষায় একদিন বলে ফেলি
পশুরা অকারণ মাথা ঘামায় না মৃত্যুর কারণ নিয়ে
চেনা কয়েকজন কেঁপে উঠে
সভ্যতার বিকাশ নিয়ে তিনটি বইয়ের উল্লেখ করে জানালো
মানুষ আর পশুর তফাত
মৃত্যুর পরিসংখ্যানের পাশে বিকেলের জলখাবার আসে
পেঁয়াজের পকোড়ায় কামড় দিয়ে ভাবি
পশুরা আগুনের ব্যবহার জানলে কি হত?
ভরপেট খেয়ে একদিন তারা রাতের দিকে আগুন জ্বেলে বসত কি গোল হয়ে?
ভাবত কি এবার থেকে তাদেরও একটা হিসেব থাকা দরকার
ইচ্ছার, অনিচ্ছার – ভোর রাতের চিৎকারের
পায়ের ফাঁকে ঢুকিয়ে পালকের বালিশের আড়ালে আদরের
সেই পালক কোথা থেকে এল? কারো চেনা কিনা
একটা টেবিল দরকার, আর তার উপরের রাখবার বইয়ের
মানুষ আর পশু মুখোমুখি বসে
নিজেদের তফাত করতে অপলক তাকিয়ে থাকবে একে অপরের দিকে
১৬৬।
তোমার বাসার নীচে প্রতিদিন যে ধোঁয়া ওড়ে
তাতে কোনদিন মাংস সেঁকে দেখেছো?
তাহলে নাহয় ছাদেই পরীক্ষা করো একদিন
পাইন গাছের ডাল টুকরো টুকরো করে খাড়া করে রাখা টিনের ড্রামে রাখবে
উপর থেকে কেরোসিন ঢেলে দেশলাই কাঠি খুঁজতে আবার নেমে আসবে নীচে
পাইন কাঠের প্রতিটি ফাঁকে ততক্ষণে ঢুকবে কারোসিন
তুমি না জানলেও, তোমাদের ছাদ জানে
পাশের বাড়ির কাকলির দেশলাই আনতে কতটা সময় লেগেছিল
তারপর ফিরে এসে লোহার জালতিটি চাপিয়ে দেবে ড্রামের উপরে
উত্তুরে হাওয়াকে তালুতে আড়াল করে জ্বেলে নেবে বারুদ মাখানো কাঠি
কাছ থেকে ফেলে দেবে তেল ভেজা কাঠে
খেয়াল রাখবে তোমার মাথার চুল যেন মুখের সামনে আসে না
তুমি না জানলেও, তোমাদের ছাদ জানে
কাকলির মুখটি চেনা যায় নি
কেউ বলেছিল ডিজেলের জন্যই এটা হয়েছে, কেরোসিনে এতটা হত না
তুমি তাই কেরোসিনই ব্যবহার করো
আগুনের শিখা একসময় নিভে গেলে দূর থেকেও দেখতে পারবে গণগণে আভা
তখনই তুমি মেরিনেট করা মাংসগুলি তারের জালতিটির উপরে চাড়িয়ে দিও
পাইন কাঠের গন্ধ মাংসের মধ্যে ঢুকতে থাকবে ক্রমশঃ
খানিকটা সময় পাবে হাতে টুকরোগুলি উল্টাবার আগে
সেই ফাঁকে চাইলে একটা রবীন্দ্রনাথের গান গেও ওপাশে বসে
তুমি না জানলেও, তোমাদের ছাদ জানে
সেই রাতে কাকলিও একটি রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছিল
- সুকান্ত-এর অন্যান্য কবিতাপাতা
- এই পাতাটির ক্লিকসংখ্যা 383

রকি 41 সপ্তাহ 6 দিন আগে
তরল রূপকথা যেন, বিগলিত বাস্তবগাথা
Flows n flows into the heart n soaks it non-stop
শুভস্মিতা 41 সপ্তাহ 6 দিন আগে
খুবই সুন্দর এক কথাচিত্র, মন ভাল হয়ে যায়।
শামিম 41 সপ্তাহ 5 দিন আগে
একেবারে আলাদা স্বাদের কবিতাগুলি, মুগ্ধতা সীমাহীন
শামিম 41 সপ্তাহ 5 দিন আগে
"আগুনের শিখা একসময় নিভে গেলে দূর থেকেও দেখতে পারবে গণগণে আভা
তখনই তুমি মেরিনেট করা মাংসগুলি তারের জালতিটির উপরে চাড়িয়ে দিও
পাইন কাঠের গন্ধ মাংসের মধ্যে ঢুকতে থাকবে ক্রমশঃ
খানিকটা সময় পাবে হাতে টুকরোগুলি উল্টাবার আগে
সেই ফাঁকে চাইলে একটা রবীন্দ্রনাথের গান গেও ওপাশে বসে"
অনবদ্য বলেছেন
সৈয়দ মুনসিফ আলী 41 সপ্তাহ 4 দিন আগে
সুকান্তভাই, দুটি কবিতাই মন ছুঁয়ে থাকল
নতুন মন্তব্য পাঠান