আজ অনেকদিন পর তোর কথা মনে হল প্রান্তিক।আজ ছিল সেই আম্ফানের দিন। বিপদ বুঝে আমাদের বাড়ি থেকে গিয়েছিলিস।সন্ধ্যে থেকে যখন ঝড় আর বৃষ্টির তাণ্ডবলীলা শুরু হল তোর মুখ চোখে জুড়ে এলো ভীষণ পরিবর্তন। মানুষের ক্ষয়ক্ষতির থেকে গাছের ক্ষতি তোকে খুব পীড়া দিত। আমরা বন্ধুরা সবাই সেটা জানতাম তুই ব্রিক্ষপ্রেমী। গাছের ক্ষতিতে তুই রুখে দাঁড়াতিস যেকোন পরিস্থিতি পরিবেশে। সেদিন আমাদের বাড়ির বিদ্যুৎ অচানক বিচ্ছিন্ন হতেই বিকট একটা শব্দ আমাদেরকে ভীষণ আতঙ্কিত করে ফেলল। এ যেন সেই কি হয় কি হয় একটা রাত। অবস্থা এমনি যেন আজই পৃথিবীর শেষতম দিন। কার বাড়ির জানলার কাঁচ ঝনঝন শব্দে ভেঙে পড়ল। আর তখনি কারা যেন একসাথে চিৎকার করে উঠল বাঁচাও বাঁচাও। তারপর সব নিস্তব্ধ। বিদ্যুতের ঝলসানিতে দোতলার জানলা দিয়ে দেখি পাশের বাড়ির উঠানের বিশাল ফলন্ত আমগাছটা মাটিতে ধরাশায়ী। যেন ঝড়ের সাথে যুদ্ধে সে হয়ে গেছে পরাজিত।তুই তখন জানিনা কোন ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠেছিলিস নাকি ভেতরে ভেতরে কেঁদেছিলি বুঝতে পারিনি। কপালে হাত দিয়ে দেখি তোর ভীষণ জ্বর। আমরা সবাই বেশ চিন্তিত এবং যথেষ্ট ব্যস্ত।তারপর কোনমতে ভয়াবহ রাত কাটল। সকালে দেখি তুই বিছানায় নেই।
আবিষ্কারের মতন আনন্দ ঘিরে ধরল তুই পাশের বাড়ির উঠানের পরাজিত আমগাছের কাছে দাঁড়িয়ে। যেন নিঃশব্দে তার আত্মার শান্তি কামনা করছিস। কাছে গেলাম তুই তখন অন্যমানুষ। পাশেই ছিল একটা মানুষ প্রমান নিমগাছ। তার ক্ষয়ক্ষতি কম; কিন্তু সে দিব্যি ঝড়কে উপেক্ষা করে সকালের সূর্যটাকে স্বাগত জানাচ্ছে। সেই গাছের গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে পরখ করে নিচ্ছিস তার আবেগ। মনে মনে বিড়বিড় করে যেন বলছিলিস -একজন হেরে গেল আর একজন রয়ে গেল এই পৃথিবীকে বাঁচাবার মন্ত্র নিয়ে। বেঁচে থেকো নিমগাছ।
দিন চলে গেছে এই কয়েকবছরে গাছ এখন সে গাছ দুতলা ছুঁয়ে ফেলেছে। হাওয়ায় দোলে গাছের ঝিরিঝিরি পাতা, পাখীরা আসে বসে নিমের ফল খায় ফুল ফুটলে আসে মৌমাছি। একদিন দেখি দিব্যি অলস বসে একটা লাল চোখের কোকিল। তার চোখে চোখ পড়তেই ডানা মেলে উড়ে গেল আকাশে। তেমনি তোর ও কোন খবর আর নেই। সেই যে ফরেস্ট অফিসার হয়ে চলে গেলি উত্তরাখণ্ডে আর সাক্ষাৎ হয়নি। যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস প্রান্তিক।