জাম রঙ শাড়ী তুমি অতো প্রশ্ন করো না

অনেক অনেকদিন পর কেউ বুঝি চিলেকোঠা খুলে
বহু টন ধুলোবালি যেন দীর্ঘ কাফেলা এঁকে
গার্বেজ ব্যগের তলায়, শুয়ে ছিলো এই
জাম রঙ শাড়ী, হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিলে এই টাঙাইল
আর ঝনক ঝনক খসখসে শব্দ করেনা, এতোটা ফ্রেজাইল !
সব কিছু সঘন ঝুরঝুরে নৈশব্দ নিশ্চুপ;
চিলেকোঠা কাঠে উইঁ পোকা, ওরাতো ঝিঁঝির ডাকের মতো শব্দ করেনা।
সময়ের টানে হায়নারা কেকা ধ্বনি না তুলেই
হাড়ের মজ্জা তক মৃত রেয়নের বুনোট ধুয়ে মুছে
খেয়ে গেছে কতো শত সহস্র রজনী আঁধারে।
এখন আর কেউ জানবে না এই অঢেল সিল্ক দেখে
একদিন কোনো প্রান্তিক লাল মাটি লাল ধুলো মাখা নির্লজ্জ একটি প্রভাত
দুর্জয় সাইমুম হতে চেয়েছিলো, 'ন্যায় অন্যায় জানিনে জানিনে' ঝড়
কেশর তুলে হাজার জেব্রা বাহিনী যাদের খুরে ধনুকের টঙ্কার
খাপ খোলা অঢেল দীর্ঘ ঘাসের চিকন তলোয়ার, তির্যক শিরোস্ত্রাণ
খোলা পয়জন আইভি, কন্টকময় ক্যাকটাস
গিলে ফেলে বলেছিলো, অতো কথা বলোনা, আমাকে পরিব্রাজক হতে দাও,
এই বনবাস অনন্ত দীঘল হোক, নয়বা নাই বা মিলুক সময়ের একশত এক লাখ বাও !
কারো জীবন পাতায় আজ পুরাতন স্বর্ণালংকার জরিপের কাজে ট্র্যাভেল পাতার লগে
নোট লেখা হবে, আহা যদি তবু হতো খাগের কলমে, এই মহার্ঘ ক্ষণে
যেখানে একটি দুরন্ত পৃথিবী তার দ্রাঘিমা বলয় খুলে এই বনে
প্রস্ফুটিত হয়েছিলো, ফণীমনসার শীর্ষে ফণা, স্থল পদ্ম অরণ্যে বরেণ্য ভাঙা খোঁপা,
বিরল জ্যামিতি গড়া নিপুণ নিকেতন অবাধ্য হল এলোমেলো
তার সাথে দুই ভরি ভারি পুরোনো কানের দুল, যেন প্রোথিত বকুল
শ্যামলা বেগুনী লতি ব্যথা করে উঠে মিল্কিওয়েতে আশাবরী ঠাঁটে
আহিরী ভৈরব নাকি সিন্ধু ভৈরবী আজ কোন পথে মীড় টেনে দেবে
অতি পাহারা দেয়া শরীর সাপটে থাকা জাম রঙ অবাধ্য টাঙাইল
যতিহীন অহংকার আরো বেশি প্রস্ফুটিত হলে এক্ষুনি তোমার এই ইবনে বতুতা
লিখবে "ঝলসানো অপরূপ", মনুষ্য জাতির ইতিহাসে, স্রষ্টার পাপিরাসে
পাতায় পাতায় রজত রেখা বয়ে যায়।
তাই কথার ফোয়ারা এক্সপ্রেসে চেন টেনে যূথিকা জানালা খুলে
এই লাল বালু বহুতল বনতলে থেমে থাকো, চুপ চুপ, চুপ,
আকাশ পাতালে যাক, স্বর্গ রশ্মি নামুক বিচিত্র এই মর্তে,
কতক্ষণ, শতক্ষণ, চুপ, চুপ, নিশ্চুপ, অনেক অনেকক্ষণ,
নাহয় এমনি করেই বেনামি মিনার হয়ে নিশ্চুপ থাকো বাকীটা শতাব্দী
নয়বা সারাটা জীবন !
- শাহনূর-এর অন্যান্য কবিতাপাতা
- এই পাতাটির ক্লিকসংখ্যা 367

সুধীর মিশ্র 46 সপ্তাহ 6 দিন আগে
‘বহু টন ধুলোবালি যেন দীর্ঘ কাফেলা এঁকে’
মন টনটন করে উঠল কবি
‘অতি পাহারা দেয়া শরীর সাপটে থাকা জাম রঙ অবাধ্য টাঙাইল’
লাইন ও অনুভূতিগুলি মন সাপটে থাকল
আবারও পড়তেই হবে, কবি
আবুল 46 সপ্তাহ 6 দিন আগে
"গান্ডিব উন্মুক্ত করা অঢেল দীর্ঘ ঘাসের চিকন তলোয়ার"
অভাবনীয় বাস্তব আর সুন্দর চিত্রটি
কবিতাটি মন কেড়ে নিল
শাহনূর 46 সপ্তাহ 6 দিন আগে
আবার পড়তে গিয়ে মনে হল তরবারি তো গান্ডিবে থাকেনা। তাই সেটাকে "খাপ খোলা" বানিয়ে দিলাম।
দীপন চক্রবর্তী 46 সপ্তাহ 6 দিন আগে
"... তার সাথে দুই ভরি ভারি পুরোনো কানের দুল, যেন প্রোথিত বকুল
শ্যামলা বেগুনী লতি ব্যথা করে উঠে মিল্কিওয়েতে আশাবরী ঠাঁটে
আহিরী ভৈরব নাকি সিন্ধু ভৈরবী আজ কোন পথে মীড় টেনে দেবে
অতি পাহারা দেয়া শরীর সাপটে থাকা জাম রঙ অবাধ্য টাঙাইল
যতিহীন অহংকার আরো বেশি প্রস্ফুটিত হলে..."
আমার পড়া আপনার লেখা সেরা কবিতা এটা।
হুমম, নাম্বার ওয়ান বলা যায়। ব্র্যাভো... ব্র্যাভো!
প্রেম নেই কোনো, পাথর তাই আয়ু পেয়েছে
শাহনূর 46 সপ্তাহ 6 দিন আগে
আপনাকে নতুন দেখছি এই মঞ্চে। অনেক ধন্যবাদ। হ্যাঁ, পড়ুন, অনেকবার পড়ুন, তবে খুব একটা সারমর্ম খুঁজে পাবেন বলে আমার মন হয়না।
শাহনূর 46 সপ্তাহ 6 দিন আগে
না, না, নাম্বার ওয়ান হতে যাবে কেন, নাম্বার সেভেন্টি ওয়ান অথবা নয়বা হল নাম্বার এইটি ওয়ান। একবার আমাদের নীল (কবি এবং ফোটোগ্রাফার) বলেছিল, সরাসরি বললেই তো ল্যাঠা চুকে যায়, অতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কেন?
আমার সঠিক উদ্ধৃতিটা মনে নেই, তবে অনেকটা অমন কিছু। নীল অবশ্য আজকাল কমপ্লিট মিসিং, তাই সে ঠিক কি বলেছিল এটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক করবার মতো কেউ নেই। বিমুখ পরিবেশে আমাদের কারো কারো এই অতি কমপ্লিকেটেড জীবনে "সরল" আর "লিরিকেল" কাকে বলে আমি জানিনা, এবং পারিনা। যেমন ধরুন, "ঝড় যে তোমার জয়ধ্বজা তাই কি জানি!/ সকালবেলা চেয়ে দেখি, দাঁড়িয়ে আছ তুমি এ কি,/ ঘর-ভরা মোর শূন্যতারই বুকের 'পরে ॥",
অথবা "আকাশের প্রিয় নীল, দারুচিনির প্রেম মিষ্টি জ্বালা/ ... নামটা জানি না পাখির, এখনো জানি না সে নাম ।/তবে ডাকের সুর স্পষ্ট মনে আছে"
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই লেখাটা পড়া এবং মন্তব্য দেবার জন্য!
রবীন 46 সপ্তাহ 4 দিন আগে
‘একদিন কোনো প্রান্তিক লাল মাটি লাল ধুলো মাখা নির্লজ্জ একটি প্রভাত
দুর্জয় সাইমুম হতে চেয়েছিলো, 'ন্যায় অন্যায় জানিনে জানিনে' ঝড়
কেশর তুলে হাজার জেব্রা বাহিনী যাদের খুরে ধনুকের টঙ্কার
খাপ খোলা অঢেল দীর্ঘ ঘাসের চিকন তলোয়ার, তির্যক শিরোস্ত্রাণ
খোলা পয়জন আইভি, কন্টকময় ক্যাকটাস
গিলে ফেলে বলেছিলো, অতো কথা বলোনা, আমাকে পরিব্রাজক হতে দাও,
এই বনবাস অনন্ত দীঘল হোক, নয়বা নাই বা মিলুক সময়ের একশত এক লাখ বাও’
woW!
রবীন 46 সপ্তাহ 4 দিন আগে
Wonderful poem!
শাহনূর 46 সপ্তাহ 4 দিন আগে
woW! এবং Wonderful poem মেডেল দুটো নতমস্তকে গ্রহণ করলাম। অনেক ধন্যবাদ!
hiya 46 সপ্তাহ 4 দিন আগে
আহা, কি অসাধারণ, আমি এতো ভালো কবিতাতে যা বলবো, অনুভুতিটুকু কোথায় অধরা রয়ে যাবে !
একেই বোধহয় বাকরুদ্ধ করা বলে ! শাহনূর, মন প্রতীক্ষা করে থাকে এমন কবিতার জন্য ! আহা !!!
কিছু না
শাহনূর 46 সপ্তাহ 3 দিন আগে
আপনি আপনার "কিছু না" নিয়ে মন্তব্যের ঘরে না এলে আমি প্রতীক্ষায় থাকি, কি জানি কেন এমনটা হয়, হ য ব র ল লিখেও মনে শান্তি আসেনা, ওই "কিছু না" কবিবরের কিছু হলোনাতো? কি জানি কি জানি। থার্ড ক্লাশ ফোর্থ ক্লাশ মালগাড়ী এলেও আপনার উঠোনে অনেক পুষ্প ঝরে, তীব্র হুইসেল বেজে ওঠে, সেটা আমি জানি। কি জানি কি লিখলাম, আনন্দে খল্লা খাচ্ছি হয়তো। অনেক ধন্যবাদ!
hiya 46 সপ্তাহ 3 দিন আগে
আজকাল মুক্তমঞ্চে আসা যাওয়া কমে গেছে - পড়া হয় প্রায় সবই, কিন্তু মন্তব্যের ঘরে গিয়ে দেখি প্রাসঙ্গিকতার ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে গেছে - কেননা প্রায় সবই মেল্ কিংবা এক্সপ্রেস ট্রেন ! আমার ছোট স্টেশনে - একটা দুটো স্লো লাইনের লোকাল বা শম্বুকগতি মালগাড়ি দাঁড়ালেই প্লাটফর্মে হুড়োহুড়ি - সিগন্যালের আতশবাজী !
থার্ড ক্লাস ফোর্থ ক্লাস - আমার নিজেরই কোন ক্লাস নেই গো কবি, সেই জন্যই ক্লাসের বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে - আর সব বড় ক্লাসের দাদাদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকি - কি করে এতো সুন্দর লেখেন এনারা - কি অনুভবের গভীরতা - কি ভাষার দখল - শব্দ চয়নে কি অপরিসীম সংযম - আর কি বিশাল অপরিসীম জ্ঞানের ভান্ডার - কত কত পড়া শোনা - বিশ্বসাহিত্যের শিরায় শিরায় এদের অনায়াস আগম নিগম ! নিজের ক্ষুদ্রতা অনুভব করি - সত্যি বলতে কি, কিছু লিখতে খুব সংকোচ বোধ হয়, কবিতাতো অনেক দূরের কথা !
যাকগে সে কথা, অনেক সময়ই ভাবি - মুক্তমঞ্চের কাছে আমার ঋণ কখনো শোধ হবে না !
আর শাহনূর - সে যেন নিজেই এক স্পর্শমনি- যা ছোঁয় তাই সোনা ! যে নিজের অহংয়ের ঝুলি শূন্য করে দুঃখের মাথায় চড়ে বসতে পেরেছে সে দুরন্ত অজেয় ড্রাগনকে পোষ মানিয়েছে - এই সার বুঝি - এই বুঝি শূন্যতার পথে আমাদের পূর্ণতার সাধনা !
সে পথে আমার প্রথম মাধুকরী - কিচ্ছু চেওনা - কিছু না !
নতুন মন্তব্য পাঠান