প্রতিমা

। প্রতিমা।
আগে একটা কাঠামো গড়ে নাও।
সংসারের জন্য পেশা পড়াশোনা ত্যাগ করা পুণ্য।
সন্তানের জন্য খিদে তেষ্টা সখ আহ্লাদ বিসর্জন দেওয়া কর্তব্য।
নিজের প্রিয় খাবারটি রান্না করেও সন্তানকে দিয়ে দেওয়াই প্রথা,
নিজে একটুখানি চাকুমচুকুম করে খেলে সেটা ঘোর পাপ।
গড়েছো? বাহ, বেশ হয়েছে।
এইবার একটা নারীর মূর্তি গড়ো এই কাঠামোর ওপর।
একেবারে দুর্গাপ্রতিমার মতো করে,
দশভূজা, তবে দশহাতে অস্ত্র না, ফিডিং বটল, ন্যাপি,
বইয়ের ব্যাগ, ওয়াটার বটল, হাতা ,খুন্তি ,প্রেশারকুকার,
সন্তানের প্রিয় খাবার, চুপিচুপি দেওয়া হাতখরচের টাকা
আর …
আর একটা মোবাইল , যাতে অজ্স্র উত্তরহীন একমুখী মেসেজ
‘ খেয়েছিস? ‘ ‘ পৌঁছেছিস?’ ‘ বেশি রাত করিস না’
‘ তাড়াতাড়ি ফিরিস’।
বাহ! বেশ হয়েছে! তবে মুখটা বড় ঢলঢল করে ফেলেছো,
ওখানে একটু ক্লান্তির ছাপ দাও,
কিন্তু মুখের হাসিটা যেন অমলিন থাকে,
আর প্রসাধন একদম দিও না। চুলটাকে এলোখোপা করো,
আর শাড়িটাতে…
হ্যাঁ শাড়িই কিন্তু, আবার সালওয়ার বা জিনস পরিও না,
শাড়িটা একটু পুরনো আটপৌরে করো,
আর হলুদের দাগ দাও।
আঁচলে একটা চাবির গোছা দিতে পারো,
তবে সেটাতে যেন সিন্দুকের চাবিটা না থাকে।
এইবার পায়ের কাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাও
স্কুল কলেজের পুরস্কার পাওয়ার সারিফিকেট,
ভাঙা হারমোনিয়াম,
না জয়েন করা চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার,
প্রিয় বন্ধুদের ঘরের ঠিকানা,
কয়েকটা অসম্পূর্ণ কবিতা আর ছবিও রাখতে পারো।
কই দেখি.. বাহ , সুন্দর হয়েছে।
এবার ওই উঁচু বেদীতে স্থাপন করে পায়ের কাছে ফুল রাখো।
যাও, এইবার বাড়ি, পাড়া ,পরগনা, প্রদেশ , দেশ, সারা বিশ্ব চেঁছে সমস্ত মেয়েদের নিয়ে এসো।
সকলকে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করাও, দুহাত প্রণামের ভঙ্গী করে।
এবার চিৎকার করে বলো ‘ তোমাদের সবাইকে এরকমই হতে হবে,
অবিকঅঅঅল এরকম, একটু এদিকওদিক হলেও কিন্তু শুনতে হবে ‘ মায়েরা এরকম নয়’।
এইবার খুঁজে খুঁজে দেখো , কোন মেয়ের চোয়াল শক্ত হলো, কে ঘাড় বেঁকিয়ে ধ্যাৎ বললো,
কে মোটেই নমস্কার করেনি, কে প্রতিমার মুখের দিকে না তাকিয়ে পায়ের নিচের ভাঙা স্বপ্নগুলোর দিকে তাকিয়ে নমস্কার করলো।
এইসব মেয়েদের থেকে সাবধান। এরা মায়ের সংজ্ঞা বদলে দেবে,
আর এদের হাতে মানুষ হওয়া সন্তানরা নারীকে পুরুষের সমকক্ষ ভাববে।
কে বলতে পারে, এদের মধ্যে কেউ সাহস করে প্রতিমা’র পেছনদিকে গিয়ে
সেখানকার খড়মাটির ফুটিফাটা অবস্থাটা বাকি মেয়েদের জানিয়ে দেবে না!
এরা সব মা হয়ে সত্যিই The boss’ হলে, তখন ওই প্রতিমার কী হবে?
আর্যতীর্থ
- আর্যতীর্থ-এর অন্যান্য কবিতাপাতা
- এই পাতাটির ক্লিকসংখ্যা 365

বীথি 1 বছর 4 দিন আগে
মাতৃদিবসের শুভেচ্ছাসহ ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম আর্যতীর্থদা
বনলতা 1 বছর 4 দিন আগে
বাস্তব অ্যানালিসিস কবিতায় সুন্দর হয়ে উঠেছে
এই দিনটির শুভেচ্ছাও থাকল আর্যতীর্থদা
ASIT KUMAR ROY 1 বছর 3 দিন আগে
অপূর্ব সৃজন...
অনেক দিন ধরে ছবি রয়ে যাবে হৃদয়ের দেওয়ালে
ঝর্না 1 বছর 3 দিন আগে
প্রচুর ভালোলাগা আর্যতীর্থদা
শাহনূর 1 বছর 2 দিন আগে
দারুণ কবিতা!
নতুন মন্তব্য পাঠান