গজেন বাবুর ভয় !
'বেবাগা বাঁশির সুরে শাল পিয়ালের বন যেন জ্বলছিল, কাঠ - ফাগুনের নষ্ট দিনে ততোধিক নষ্ট নায়িকার এক গোটা ভুবন জুড়ে আরো এক নষ্টামীর দোসর যমুনার পিচ্ছিল ঘাট আর তাতে হঠাৎ পিছলে যাওয়ার হু হু প্রবল আকাঙ্খা - সব ওই হতচ্ছাড়া গোকুলের নষ্ট কানু ছোঁড়াটার জন্য !
কি যে আছে ওই ছেলেটার গভীর দুই চোখে, চোখে চোখ পড়লে যেচে চৈতন্য খোয়াতে ইচ্ছে করে - লাজ লজ্জা শাশুড়ী ননদ ঘর বার উঠোন কাঠান শরম ভরমের আর কোনো ভেদ থাকে না যেন ! সে যে কি সব্বোনাশ, যার হয়েছে কেবল সেই জানে !
আজ যে কি হয়েছে এই সৃষ্টির কে জানে - ! দোল পঞ্চমীর হিয়া পোড়ানো ঘর ভোলানো হু হু বাতাস, সকাল থেকে সামান্য আওয়াজে চমকে উঠছেন পরম প্রকৃতি রূপিণী প্রেম ও হ্লাদিনী শক্তির পরম আধার - শ্রী রাধিকা ! আকাশে বাতাসে শুনছেন অনাহত অতি অপার্থিব প্রাণ কাড়া বাঁশির মধুর সুর - মধু - সর্বত্র মধু যেন চুঁইয়ে চুঁইয়ে গ'লে গ'লে পড়ছে - জলে, স্থলে আহারে, বিহারে, আসনে বসনে মধু হি মধু - আকাশে মধু,- বাতাসে মধু - সংগীতে মধু - নিঃশ্বাসে মধু, বিশ্বাসে মধু, হিয়ায় মধু - ক্রিয়ায় মধু - মধুরে মধুর মাধব যেন সমস্ত প্রপঞ্চ চরাচর আকণ্ঠ প্রেমে নিমজ্জিত রেখেছেন - সমস্ত সৃষ্টি আজ আকুল হয়ে ডাকছে প্রেম পাগলিনী রাই কিশোরীকে - এস এস হে প্রেমের চিরকালীন আনন্দমুরতি অসম্ভাবিনী অপরূপা লক্ষীশ্রী - একটি বার কানুর বক্ষলগ্না হয়ে জগৎকে দাও প্রেমের রসঘন দিব্য অনুভব - যুগযুগান্ত ধরে কালের পটে লেখা হোক প্রেমের এই অসম্ভব জয়গাথা -
হ্যাঁ, তিনি যাবেন, যেতে তাকে হবেই - আজ সমস্ত বিশ্ব-চরাচর যদি দাঁড়ায় পথরোধ ক'রে - তবু গোপ কুলবধূ যাবেন, সমস্ত সমাজের, লোক ও গণের ভ্রুকুটি হেলায় উপেক্ষা করে যাবেন তিনি সেই উপবনে - স্বেচ্ছায় নিজেকে তুলে দিতে সেই কালো মানিকের হাতে - দেখতে চান তিনি - এই প্রেমের শেষ কোথায় - সমস্ত সৃষ্টি যেন সময়ের ঘোমটা খুলে আজ অঞ্চল পেতে এসে দাঁড়িয়েছে শ্রী রাধিকার সামনে -
আজ চৈতন্য রূপিণী অপরূপা চৈতন্যময়ী চৈতন্য খোয়াবেন গো -
সমস্ত সৃষ্টির পথ তাই অবিরল স্নেহ মেখে সেই মহাকালের অভ্যর্থনায় আকুল-
বাতাসে মধুক্ষরা মধুগন্ধ, আকাশে অপরূপ দ্যূতিচ্ছটা, নয়ন জুড়ে সুন্দরের হোরিখেলা ---
পঞ্চেন্দ্রীয়ের অপূর্ব মহোৎসব ! কি এক অনাস্বাদিতপূর্ব সম্পূর্ণ আস্বাদনের ঘনঘটায় সমস্ত আনন্দের উপকূল আজ যায় যায়, ছাপিয়ে যায় - যমুনা আজ ঘাট পেরিয়ে দুই হাত বাড়িয়ে স্বয়ম চৈতন্যময়ীর ঘটে জল দিয়ে তার তৃষ্ণা মেটাতে এসেছেন যেন !'
গজেন বাবু এই অবধি লিখে উঠে একটু জল খেতে গিয়েছিলেন, এসে দেখলেন তার লেখা কাগজগুলোকে কেউ যেন সাংঘাতিক রাগে ফালা ফালা করে চিরে কাটা ছেঁড়া করেছে, আক্রোশে সেগুলোকে টুকরো টুকরো করেছে - দুমড়েছে, মূল জায়গা গুলোয় ! তার ভয় হলো, এ নিঘ্ঘাৎ দেব-দেবীর ক্রোধ, তখনি মনে হয়েছিল, দেবদেবীর প্রেম নিয়ে এতটা বাড়াবাড়ি না করলেই বোধয় ভালো হতো !
ভয়ে ভয়ে সাথে সাথে এসব লেখালেখি বন্ধ করে গজেন বাবু 'ছোটদের ছোটোহাতি' বলে গল্পটা ধরলেন !
জানলার বাইরে গ্রিলের নীচে গাবলু, পাশের ফ্ল্যাটের ঘন্টুবাবুর পোষা গাবদা হুলোটা বসে একমনে নিজের থাবা চাটতে চাটতে একটু মনক্ষুন্ন হয়ে ভাবছিল, নাঃ, নখে ধার দেওয়ার জন্যে কাগজ ব্যাপারটা মোটেই সুবিধের নয়, অন্য কিছু একটা খুঁজতে হবে ! বেকার পন্ডশ্রম হলো- ধ্যুস শালা !
kalyan 29 সপ্তাহ 6 দিন আগে
বেশ তো, বেশ উপভোগ্য
ক্রান্তি 29 সপ্তাহ 6 দিন আগে
সেই গানটা কেন মনে পড়ল, হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাই নি
যাইহোক, জম্পেশ লিখেছেন - হিয়া মানে দিল খুশ
এনা 29 সপ্তাহ 6 দিন আগে
দারুণ
এনা 29 সপ্তাহ 6 দিন আগে
হিয়াদার লেখা?
ক্রান্তি 29 সপ্তাহ 6 দিন আগে
হিয়ায় মধু
আর্বানমিশুকে 29 সপ্তাহ 6 দিন আগে
হিলারিয়াস !
রুবারু 29 সপ্তাহ 6 দিন আগে
বেশ মজার
শুনশান 29 সপ্তাহ 5 দিন আগে
"কি যে আছে ওই ছেলেটার গভীর দুই চোখে, চোখে চোখ পড়লে যেচে চৈতন্য খোয়াতে ইচ্ছে করে"
মাঝে মাঝে ভাবি জনম বৃথা গেল, এরকম চোখ বা এরকম চোখের শতকরা একভাগও কেন পেলেম না
যথা সম্ভব 29 সপ্তাহ 4 দিন আগে
আমার ছোটবেলায় দেখেছি বাস লরির পেছনে খুব জ্ঞানগর্ভ উপদেশ লেখা থাকতো - - কে বা কোন সক্রেটিসের মতো জ্ঞানী লোক যে এগুলোর উদ্ভাবক কে জানে, কিন্তু জাস্ট অসাধারণ ! দু একটা এখনো মনে আছে -
"দেখবি আর জ্বলবি - লুচির মতো ফুলবি !" -অর্থাৎ - পরের সম্পত্তি বা গুণ দেখে একদম হিংসে করতে নেই তাতে ওই জ্বলন আর ফুলন ছাড়া কিছু লাভ নেই -
আর একটা হলো "হিংসে করোনা - চেষ্টা করো - তোমারও হবে !"
পরেরটা বোধহয় স্বান্তনা পুরস্কার টাইপ ! সে যাই হোক - আমার দুটো উপদেশই মনে পড়লো !
এখন প্রশ্ন হলো, কিন্তু কেষ্টর মতো ওই রকম চৈতন্য খোয়ানো চোখ কি চেষ্টায় হয় ??
অযথা সম্ভব 29 সপ্তাহ 4 দিন আগে
হিয়াদার লেখা?
কি মুশকিল !
ছোটবেলায় আমার হাতের লেখা পড়তে হলে জন্য দশেক হস্তরেখা বিশারদ ডাকতে হতো, কারণ আমি নিজেও কিছু খাতায় লিখে ফেললে সেটা ফিরে আর পড়তে পারতাম না ! (এখনও উন্নতি বিশেষ কিছু হয়নি, শুধু G বোর্ড এসে সেই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেয়েছি !)
আমার পরম স্নেহময় পিতৃদেব শুধু বলে বলে মুখ ব্যাথা করে ফেলতেন -"কালি কলম মন - লেখে তিন জন !- বাবা প্রথম দুটো তো আছেই - তিন নম্বরটা (অর্থাৎ মনটা) দয়া করে লাগাও ! "
সুতরাং "মন যদি হিয়া হয়, তবে হিয়া
নাহলে থাকুক ব্যাটা পথেতে পড়িয়া !"
ঝর্না 29 সপ্তাহ 2 দিন আগে
প্রথম গল্পটা চেনা প্লট। ভাবছি দ্বিতীয় গল্পটা নিয়ে।
ঠিক কেমন হতে পারে!
অযথা সম্ভব 29 সপ্তাহ 1 দিন আগে
ভেবে কি লাভ, লিখে ফেললেই তো হয় ! আচ্ছা একটা ক্লু দিচ্ছি -:
"গজেন বাবু এতো ভয় পেয়ে গেছিলেন যে কিছুতেই ছোট হাতির চেহারাটা মনে করতে পারলেন না, যতবার ভাববার চেষ্টা করলেন, নীচের ফ্ল্যাটের গোদাবরী দেবীর চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো ! ক দিন আগে হঠাৎ পাওয়ার কাট হয়ে গেছিলো আর অন্ধকারে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ে তিনতলার সিঁড়ির ফ্লাইটে কে যেন হুমড়ি খেয়ে গজেন বাবুর ওপর পড়েছিল ! মারাত্মক ভয়ে গজেন বাবু "বাবাগো হাতিতে মেরে ফেললে গো !" বলে চেঁচিয়ে উঠে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন আর জ্ঞান ফিরতে প্রথম যে প্রশ্নটি করেছিলেন, তা হলো, এপার্টমেন্টের সিঁড়িতে হাতি এলো কোত্থেকে !
তার দোষ ছিলোনা, কারণ সেদিনই সমস্ত বাংলা টিভি চ্যানেলে ফলাও করে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে সকাল থেকে ব্রেকিং নিউস দেখাচ্ছিল যে বাঁকুড়ার শালতোড়া জঙ্গল থেকে একটা হাতি নাকি জাতীয় সড়ক ধরে কলকাতার দিকে আসতে শুরু করেছে !
কিন্তু সে কথা কেউ বুঝলে তো !
গজেন বাবুর প্রশ্ন শুনে গোদাবরী দেবী সেই যে গজেনের এপার্টমেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তারপর থেকে দেখা হলেও হাসি তো দূরস্থান, মুখ ফুটে একবারও হ্যালো হাই কিচ্ছু বলেন নি ! মাঝখান থেকে গোদাবরী দেবীর ফ্ল্যাট থেকে মাঝে মাঝেই যে আমদানী হতো ভালো ভালো ডাল বাটি চূরমা টাইপের সুখাদ্যগুলো সেই সমস্ত সুস্বাদু রাজস্থানী খাবার দাবারের সাপ্লাই গুলো সব বন্ধ হয়ে গেছে ! গোদাবরী দেবী রাজস্থানী হতে পারেন কিন্তু জন্ম থেকে কলকাতায় আর শিক্ষা দীক্ষা বন্ধুবান্ধব সব এখানে এবং বাংলা ভাষা এক্কেবারে জলবৎ তরলং করে বোঝেন !"
ক্রমশ: --
বাকীটা - আপনার জন্যে রাখলাম দিদিমনি !
ঝর্না 29 সপ্তাহ 1 দিন আগে
দারুন হলো তো।
আচ্ছা। চ্যালেঞ্জ এক্সেপ্টেড। একটু সময় নিলাম।
অযথা সম্ভব 29 সপ্তাহ 1 দিন আগে
"হোক গল্পকথা - হোক কথকতা !"
ঝর্না 29 সপ্তাহ 1 দিন আগে
হ্যালো একেন!
নম্বরটা খুব চেনা যদিও ফোন আসা বন্ধ প্রায় অনেক বছর।
- হ্যাঁ বলছি। কিন্তু তুই মানে তুমি এতদিন পরে?
- কেন করতে নেই। তেমন তো কথা ছিল না। বরং বলেছিলে তোর সুখে দুঃখে এই বন্ধুটিকে পাবি। আর তাই
- সে ঠিক আছে, কিন্তু ঘটনাটা কি যে হঠাৎ করে মনে পড়লো।
- একজনকে ঠিক করতে হবে!
- ঠিক মানে?
- ঐ যেমন কলেজে মন্দারকে করেছিলে, তেমনি। মনে আছে পানাপুকুরের হাবুডুবু!
- ওটা ভালো করিসনি তুই। ও সিরিয়াসলি কিন্তু তোকে .... সেদিন পার্টিতে তোর নাম উঠতেই ওর হিচকি আর থামে না। পুওর গাই!
- এবার ওর তরফদারি না করে যেটা বলছি সেটা শোনো। আমার নতুন প্রতিবেশী এই কদিন হলো এসেছে। বেশ ভালো চলছিল জানো কিন্তু এখন!
- এখন কী
- আররে এখন দিনরাত খোঁটা দিচ্ছে। কাল ডালচুরমায় খুঁত, গত পরশুতে থেপলায় খুঁত। মনুমাসিকে বলেছি ও বাড়িতে বাটি চালানো বন্ধ করো। কিন্তু সেও শুনছে না।
- তা আমাকে কি করতে হবে?
- জিবিকে ফলো করে ওর ডিটেইলস আমার চাই।
- জি বি?
- গজেন বরঠাকুর। আর যাই হোক, থেপলার অপমান সহ্য করা যায় না।
(চলুক তাহলে )
ঝর্না 29 সপ্তাহ 1 দিন আগে
লেখাটা "সম্ভবকবি" শুরু করলেও যে কেউ মানে সংযোজনে আগ্রহী হলে অবশ্যই লিখবেন।
কারণ বিশ্বাস করি,
মশলা এক হলেও হাত বদলে রান্নার স্বাদ আলাদা হয়। আর এখানে তুমুল লেখকেরা আছেন যারা গদ্য ও পদ্য দুটোতেই সমান ভালো লেখেন।
সো ওয়েলকাম ইউ অল টাই ইওর সিটবেল্ট অ্যান্ড রেডি ফর দ্য জার্নি অফ মেকিং ছোটদের ছোট হাতি
নতুন মন্তব্য পাঠান