কাঁঠালি চাঁপার গন্ধ

১৩৩।
একদিন দীঘির পাড়ে বসে ভাবছি
ওপাশ দিয়ে ট্রেন গেলে কেমন হত!
কারো হাত নাড়া দাগ কাটত কি মনে?
এমন সময়েই পাশে কেউ এসে বলল
আমাকে কাঁঠালি চাঁপা ফুল পেড়ে দাও কয়েকখানি
অবাক হয়ে দেখলাম
ভিজে মাথার একরাশ চুল টপটপ করে
কাঁধ ভিজিয়ে দিয়েছে কখন যেন!
জানতে চাইলাম তুমি কে?
জলের দিকে আঙুল তুলে সে বলল,
ওখানে থাকি –
ভাবি এ কি জলকন্যা নাকি জলপরী?
নগ্নতা ঢাকা হাঁটু চুল কৈ?
নাকি ট্রেন থেকে নেমে পড়া কেউ?
পুকুর পাড়ে তো কাঁঠালি চাঁপা নেই!
জিজ্ঞেস করি - তুমি কি বকুল ফুল নেবে?
তাহলে তোমার কোঁচড় ভরে দিতে পারি গাছে উঠে!
সে জানায় শুধু চাঁপার গন্ধেই প্রিয়তমের ঘুম ভাঙবে -
তারপর আমার হাত দুখানি টেনে তালুতে দুফোঁটা অশ্রুকণা দিয়ে বলে
এই নাও তোমার পারিশ্রমিক
চকচকে অশ্রুকণা হাতে নিয়ে কাঁঠালি চাঁপার সন্ধানে বেরোই -
১৩৪।
সেদিন ফেরার পথে মাঝ আকাশে
এয়ারহোষ্টেসকে জিজ্ঞেস করলাম – তোমার বাড়ি কোথায়?
মৃদু হেসে মেয়েটি বলে তুমি আগে শোনাও বাড়ি কাকে বলে!
প্লেনের জানালার ওপাশে আকাশ দেখি -
ওখানে কার বাড়ি?
তার চেয়ে বরং বাড়ির গল্প করি চলো –
বারান্দায় রাখা হাস্নুহানা এতক্ষণে বর্ষায় ভিজছে
শুকাতে দিয়ে আসা কাচা কাপড়গুলি
ভরে উঠেছে শুষে নেওয়া মিষ্টি গন্ধে –
জিজ্ঞেস করি তোমায় দরজা খুলে দেবে কে?
সে বলে উঠতে যায়, টবের নীচে রাখা আছে ঘরের চাবি –
এভাবেই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে
মেয়েটি বাড়ি কাকে বলে শিখে নেয় -
১৩৫।
এত উপর থেকে পাশাপাশি সব মানুষকেই কাছের মনে হয় –
মনে হয় যেন ফিসফাস করে বলছে লাজুক গোপন কথা।
কেউ পুষ্পস্তবক হাতে ধরিয়ে ফিরে যায় ঠেস দেওয়া বাইকে
এত উপর থেকে ভাবি - বড় মানাতো
হলুদ ছাপা জামার সাথে কালো চুলের আড়ালে থাকা ফিতে
এত উপর থেকে ফিতে চেনা যায় না
মনে হয় ওই চুল জড়িয়ে রেখেছে নিশ্চয়ই কেউ!
ক্রমশঃ আলো জ্বলে ওঠে
এত উপর থেকেও বোঝা যায় পর্দার ওপাশে
অনেক চেনাকে আরো চিনে নিচ্ছে কেউ –
এত উপরেও বাতাস আসে
কখনো এলোমেলো করে ফেলে আসা গল্পগুলি
- সুকান্ত-এর অন্যান্য কবিতাপাতা
- এই পাতাটির ক্লিকসংখ্যা 330

শাহনূর 2 সপ্তাহ 22 ঘন্টা আগে
তন্ময় হয়ে পড়লাম। খুব সুন্দর লিখেছেন, সুকান্ত'দা!
শাহনূর 2 সপ্তাহ 22 ঘন্টা আগে
"এভাবেই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে
মেয়েটি বাড়ি কাকে বলে শিখে নেয় -"
১৩৪ সবচেয়ে বেশি ভালোলাগলো। অপূর্ব এই গল্পের মতো কবিতাটা।
শাহনূর 2 সপ্তাহ 22 ঘন্টা আগে
"ক্রমশঃ আলো জ্বলে ওঠে
এত উপর থেকেও বোঝা যায় পর্দার ওপাশে
অনেক চেনাকে আরো চিনে নিচ্ছে কেউ –
এত উপরেও বাতাস আসে
কখনো এলোমেলো করে ফেলে আসা গল্পগুলি"
কেয়াবাত, কেয়াবাত। সত্যি অপূর্ব এই "এলোমেলো করে ফেলে আসা গল্পগুলি"!
সুকান্ত 2 সপ্তাহ 14 ঘন্টা আগে
শাহনূর সাহেব-কে ধন্যবাদ। আপনি মন দিয়ে কবিতাগুলি পড়লেন এটা দেখে খুবই আপ্লুত হলাম।
তবে আমাকে 'দাদা' বলবেন না প্লীজ - যতদূর আপনার লেখা লিখি বা মন্তব্য পড়লাম, তাতে মনে হয় আপনি আপনার থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট হব।
শাহনূর 2 সপ্তাহ 5 ঘন্টা আগে
তথাস্তু - তবে তাই হোক - অবশ্যই মাথা নত হয়ে এলো!
মধুমঞ্জরী 2 সপ্তাহ 1 মি আগে
অপূর্ব লাগল সুকান্তদা
যেন একটা অন্য কোনো রূপকথা জগতের আমেজে ডুবলাম-ভাসলাম
নাম্নেই 1 সপ্তাহ 6 দিন আগে
অত্যাশ্চর্য ও অসাধারণ অমৃতের স্বাদ এই কবিতাগুচ্ছে ... কবিকে শুধু না, পাঠক হিসাবে এই পাঠককে অমরত্ব দিয়ে দিচ্ছে কারণ এই কবিতা পড়া মানে আরেক অনির্বচনীয় জীবনে প্রবেশ করা ...
অনি 1 সপ্তাহ 5 দিন আগে
দারুণ কবিতাগুচ্ছ
আর্বানমিশুকে 1 সপ্তাহ 4 দিন আগে
সো ভেরি ওয়ান্ডারফুল ফ্লেভারস্!
শৈলেশ সামন্ত 1 সপ্তাহ 4 দিন আগে
অন্য, ভিন্ন স্বাদ, কী স্নিগ্ধ তবু কী গভীর!
অনেক, অনেক অভিনন্দন নিন কবি!
খায়রুল আহসান 1 সপ্তাহ 1 দিন আগে
"চকচকে অশ্রুকণা হাতে নিয়ে কাঁঠালি চাঁপার সন্ধানে বেরোই" - আহা, কি সুন্দর, কি স্নিগ্ধ, কি মনোরম!
"সে বলে উঠতে যায়, টবের নীচে রাখা আছে ঘরের চাবি –" - আমরা উভয়ে একসাথে বাড়ি থেকে বের হবার সময় এমন কত শত জায়গায় যে চাবি লুকিয়ে রাখেন আমার স্ত্রী!
"এভাবেই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে
মেয়েটি বাড়ি কাকে বলে শিখে নেয় -" - অসাধারণ, অতুলনীয়।
"অনেক চেনাকে আরো চিনে নিচ্ছে কেউ –" - দ্ব্যর্থবোধক, হয়তো।
ভালবাসা ভালবাসি....
নতুন মন্তব্য পাঠান