লড়ে যা সন্দিপন

বন্ধু আমায় মুঠোফোনে খুঁজে বেড়ায়। আমি সাড়া দিইনা ইচ্ছা করেই। তবু সে ফোন দেয় আশা করে আমি হয়তো বলবো হ্যালো... সন্দিপন... কেমন আছিস? সকাল বিকেল সন্ধ্যা ঘনিয়ে যায় বিশেষ বন্ধু ফোন ধরেনা। দোলাচল তোর মনে দোলাচল আমার ভিতর। তবু অন্তর বাহিরের ঝড় দমিয়ে রাখবার চেষ্টা করছি নিরন্তর। আসন্ন ঝড়কে বাক্সবন্দী করে নিজেকে গর্বিত বলে মনে করছি ঠিক এমনটা নয়। হয়তো নিছক খেয়ালবশতঃ হয়তো অভিমান নয়তো প্রচণ্ড রাগ কিম্বা ভীষণ রকম দুঃখের প্রকাশ। আর একটা বিষয় নিছক কৌতূহল বশতঃ দুষ্টুমি করছি -দেখিনা এরপর কি হয়? জানবার প্রবল ইচ্ছা অন্তর বাহিরে অবিমিশ্র একটা অনুভূতি কুড়ে কুড়ে খেয়ে চলেছে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। কিন্ত নিজেই বুঝতে পারছিনা কেন এমন ব্যবহার করছি প্রিয় বন্ধুর সাথে।
অথচ, সত্যিই কিছু কথা বলবার ছিল। সেকথা বলে ফেলা উচিত নাকি কিছু কিছু সত্য প্রকাশ করবার প্রয়োজন হয়না। সময় এলেই তা সূর্যালোকের মতন আপনিই প্রকাশ পায়। তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এটাও ঠিক নিজেকে অত উলঙ্গ নাইবা করলাম। কিন্ত অন্তরে একটা ঘুণপোকা আছে সে অনবরত মনের কড়িবরগা কুট কুট করে কেটে চলেছে। হয়তো বিদ্রুপ নয়তো প্রসংসা করছে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। টিক টিক বা ঠিক ঠিক শব্দ সময়ের ঘড়িটার মতন। এমনি সময় দেয়ালের সাদা টিকটিকি টিকটিক করে ডেকে উঠলো। তখনি ঝনঝন শব্দে তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব কেটে গেল যেন সাজবার ঘরে বড় আয়নাটা ভেঙে পড়ল মেঝের উপর।
ফোনটা কি বেজে উঠল ঝনঝন করে? আলোকিত স্ক্রিনে অজানা নম্বর...দোলাচল ভেঙে পজিটিভ বাটন টিপে দিয়ে যা শুনলাম সেটা শুনবার জন্য আমি একেবারেই তৈরি ছিলাম না। আপনি সন্দিপনের বন্ধু, একবার আসতে পারবেন এখনি বাইপাসের ধারে... হয়তো এ যাত্রায় বেঁচে গেলেও উনি বেঁচে যেতে পারেন আপনাকে পাশে পেলে... ধরে নিচ্ছি আপনি আসছেন...। একরাশ রুপালী মাছ স্বচ্ছ নদীর জলে চিকচিক করে উঠলো। শিরদাঁড়া টানটান মন প্রাণ ভীষণ উচাটন। অনায়াসে শব্দ উঠে এলো -আসছি আমি আসছি। খেলা ভাঙার খেলায় তোকে হেরে যেতে দেবনা সবসময় তোকে জিততেই দেখতে চাই সন্দিপন।

কে গো তুমি -

সহজিয়া সাধনের একান্ত আপন এক অদ্ভুত আহ্লাদী
সহজ জলের মতো, ভূমিতে বিছানো নদী -
অমৃতে অশনে আছো, অপরশ অলঙ্ঘ্য ব্যবধান
হয়ে, মাধবী মধুর ক্লেশে, অক্লেশে ভরিয়ে রেখেছো ব্যবধান !
পিছুপিছু,
আদরে তুমুল সবুজ কিছু
অবুঝ সুখের চারাগুলো, তুমি তুমি খেলে
মগ্ন ঠোঁটে ছুঁয়ে আছে ঋতম্ভরা আকাশী আড়ালে,
স্থির ছবিটির মতো বিলগ্ন অপেক্ষা নিয়ে
সময়ের ঋজু দম্ভ শ্রান্ত -
তোমার পায়ের অনামী প্রান্তর ছুঁয়ে -
দিন শেষে ঘাম মোছা সাধারণ সুখের আঁচলে
শেষাশেষী পরিপূর্ণ সাড়ে তিন হাত জমি !

আমার না হাঁটা পথ ছেয়ে আছো তুমি
বিকেলের অযথা আদরকাড়া তামসী যোগিনী,
মন্দাক্রান্তা ছন্দের মন্দ সংকেতধ্বনি
আর কিছু অশ্রুত ফিসফিস -
শীতশেষে ঋতুমতী খেজুর শাখায়, অহর্নিশ ,
ফাল্গুনের নষ্ট দ্বন্দ আশা দুরাশার ইঙ্গিত - মৃদু হাওয়া
ওঠাপড়া, বাতাসে কবিতার ইচ্ছে মিশে যাওয়া
রোজ রোজ অসম্ভব দুরাশার সফল স্বপ্নের মতো
নিঃশ্বাসে অদ্ভুত পেলব লাবণ্যের ঘ্রান যত -
সেরকমই অনর্থক
অপরূপ সার্থক রূপরেখা হয়ে ছুঁয়ে যাও,
হেসে যাও, বলে যাও
এসেছো যে কেবলি সে অহেতুকী তৃষ্ণা, কৌতূহল
সর্বংসহা মগ্ন প্রেম, বাঁধভাঙা জল -
নীতির পাহাড় ভেঙে অভিমানী অপূর্ব্ব দামিনী
যোগের অতীত তুমি কামহীনা যোগিনী কামিনী
কামনার মহাকাব্যে লিখে যাও নতুন প্রারম্ভ
ভালোবাসা পথ চেয়ে বসে থাকে নিয়ে এক অন্য আরম্ভ
আসলে কে গো তুমি,
অদ্ভুত একান্ত সব্বনাশা ভালোবাসা নিরূপা কান্ডারী
সহজিয়া সাধনের বৈতরণী পার ওগো আদরের নারী !

তোর ছায়া কাঁপে চিরদিন
সেই যুগ থেকে একে একে নেমে গেছে যারা
ফেরেনি কখনও,পৃথিবীর আনাচ কানাচ
বৃথা অন্বেষণ রৌদ্রময় আজও আছে পরে
অন্তরালে ঠেকে, ঢেকে গেছে মুখ
মেঘ রৌদ্র পরে না কখনও
কি বিপত্তি দেখ,এখানে উন্মাদনা অথচ আঁধার!

ধূলাস্তর ঠেলে সে জীবাশ্মে
তোর চিহ্ন নেই ভস্মে মাখা অযথা শরীর
এ কার্পণ্য কেন দিনরাত্রি বয়ে গেছে
গাছেরা মাতাল,বেহুশ হয়েছে সয়ে সয়ে?
শাখে তার অর্বাচীন চোখ...
কোন আলো নেই আর উৎসবের মতো
চতুর্ভূজে দৃষ্টি আজো খিন্ন ব্যবধান
ফিরে গেলি তুর্য্যে তুই অশ্রু ধোয়ানো জনপদ
দেশান্তর সব !
কোল থেকে নেমে গেছে শিশু
এ তট মেদিনী উষর হয়ে আছে, চলে যাবে
কিছু পরে যাজ্ঞবল্ক ছকের ভেতর
শুধু তার আঁকিবুকি গোপন কথারা
গুম হয়ে রয়ে যাবে ঢিঁবির ভেতর!
সব রাত খোয়াবে অধর
তবু তুই জামবন চৌহদ্দি বেঁধে দিবি
মুখ ফুটে তোর ছানা বেড়ে যাবে
ওম চেয়ে দুধ মুখ তার, আমাদের জ্বর হয়
জ্বর হয় কোষের ভেতর, পৃথিবীও জ্বরে কাঁপে
চাঁদ গ্রহ কাঁপে সব ওমের ভেতর !!

কবিতাটি যার ঘরে থাকে, সে তাকে হেলায় ফেলে রাখে । লেখে না কলমে, মনে গ্রন্থনাটুকু দেয় না।
এলোচুল, রেখাহীন চোখ - চন্দনী আকাশের নীচে- একা ছাদে হাঁটু মুড়ে ভেজে, গালে নক্ষত্রের জলদাগ

কবিতাটি ঘর ছাড়ে, অভিমানে। পথ প্রান্তর তার ব্যথায় মথিত হয়ে ওঠে।
যার ঘরে কবিতাটি ছিল, এতদিনে সে পাগল জাগে, এ ঘর ও ঘর করে, হাতড়ায় ...চুলে জট... টবে মড়া গাছ ...

ঋতু পালটালে হাওয়া ঘুরে যায় ... ঘরদোর বিষ বিষ লাগে ... পাগলের দিন রাত, রাত আরও রাত... বসন্ত শীত ... বসন্ত দারুণ নিদাঘ ...

ত্রয়োদশী ফাগুন প্রদোষ...
ছুঁলেন প্রণাম আশুতোষ...

কবির নির্বাসন
- (রক্তিম)
কবির নির্বাসন!
কবি নিশ্চুপ!
কবি কী ঘুমিয়ে পড়েছে!
কবি কী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে?
নাকি নিতান্ত অভিমানে দুরত্ব রচে!
নাকি আতঙ্কিত দুঃসহ কোন ঝড়ের পূর্বাভাষে।
একমাত্র মৌনতা দূর করে কবিই বলতে পারে।

কিছু কিছু অভিমানে আকাশ ভেঙে পড়ে
কিছু কিছু কিরণে ফুলেরা মুষড়ে পড়ে ;
কিছু কিছু যন্ত্রণায় পাহাড় চুরমার
কিছু কিছু অনিয়ন্ত্রনে হুলুস্থুল গ্রহ থেকে গ্রহান্তর;

কবি অলক্ষে শান্তিবারির স্বরলিপি লিখে রাখে
ভালবাসা আলপনায় বিশ্বশান্তির ছবি আঁকে।
হৃদয়ের তন্ত্রিতে বিলম্বিতে রাগ মেঘমল্লার
বিশ্বজুড়ে যে যুদ্ধের বিউগিল, হয়তো সেই ভাবনার;

তাই বসন্ত বাহার নয়
বিব্রত বসন্তের বার্তা আর নয়;
পোড়া হৃদয়ের শান্তির জন্য
একমুঠো সিক্ত মাটি কিম্বা অশ্রুবারি।
তাই ক্রমশ বিলম্বিত থেকে ঝালায়
মেঘমল্লার বাজায় রুদ্রবীণায় ।

ভালবাসার দিন

কত পিছুটান
কত প্রতিক্ষা
অলিখিত সেইসব ধুলোখেলা
মন দেয়া-নেয়ার দিনগুলি
গোলাপের নির্জাস নিয়ে
ফিরে ফিরে আসে না আর
ইচ্ছেরা ভুলে যায়
কুড়িয়ে পাওয়া পাপড়ি
বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বলি
নিষিদ্ধ দুপুরে দেয়া একটা গোলাপ কলির
নাম “ভালবাসার দিন “!
তুমিও কি তাই বলেছিলে ?

ভ‍্যালেনটাইন’স ডে

হাফ প্রাইজ ! হাফ প্রাইজ !!
ফিফটি পার্সেন্ট অফফ !
কৌতূহল নিয়ে ঢুকে দেখি…
আহা ! অপূর্ব সব গোলাপ
অর্ধেক দামে বিক্রি হোচছে !
ভ‍্যলিনটাইনস ডে’তে প্রেমিকদের
গোলাপ কিনতে উৎসাহিত করছে
কিনে ফেললাম একতোড়া বেগুনী গোলাপ !
পরক্ষণেই ভাবি, কাকে দেব এ গোলাপ ?
যাকে দেওয়ার ছিল…
সে আজ মন সমূদ্র পেরিয়ে কোথায়…
মুছে গেছে তার নাম ঠিকানা ….
এ গোলাপ তার
যাকে নিয়ে জীবনকে ভালবাসার গল্প
জীবনের অর্ধেক গাঁথা
বাকি অর্ধেক বাকিতে রইলো !!

@ কুমু ১৪ ফেব্রুয়ারী ।

রাতের আকাশে দেখলাম, ঈশ্বর,
বেচারি একাই বসে, ভাবে কি অভাবে, মস্ত একেশ্বর !
দেখলাম, ঈশ্বর বড়ই একা, বোকাসোকা ! অহেতুক পরনির্ভর !
আমি ভালই আছি সে তুলনায়, গড়ে পিটে,
সুখ দুঃখের পুলি পিঠে হয়ে ফুটে, সংসার হাঁড়িতে ছলনায়,
কম বেশি প্রতিবেশী, পেটমোটা বৌ আর লেন্ডিগেন্ডি ছানাপোনায় !
কানে গুঁজে তুলো, কুলো বেঁধে পিঠে, পুলি পিঠে, ভালই আছি, জানিস ঈশ্বর !
মায়া না কি জানি, বলে, তোর ব্রহ্মজ্ঞানী, ছলনা ছেনালী,
সে হয় হোক, আমার তো দিব্যি শাপেবর !

চাটুজ্জ্যে মশাই প্রাজ্ঞ, বলেছিল কেন যাব !
তারপর যার যে রকম,
চলছে চলুক সব, ঝালেঝোলে হরিবোলে বকম বকম !
তোর তৈরি ভুলভুলাইয়া, ঈশ্বর -
তার এক কোণে, ডুবজল, লালজল, মাছভাজা খাব।
আজব এ ভুলভুলাইয়া, এক কোণে দিব্যি পড়ে রব !
চাটুজ্জ্যে মশাইই প্রাজ্ঞ,
ঠিকই বলেছিল -
- যে আড্ডা জানিনা সেখানে কেনই বা যাব !

কি এমন দায় ঝাড়বাতি নিভে গেলে
ফুরালে আসর! কিছুটা থিতিয়ে গেলে ঘুঁঙুর
আঁওয়াজ, চাঁদমুখে চেয়ে রব
পিয়াসী চাতক, হয় ক্ষতি হোক প্রণয় জড়ানো মোহের গেলাস
দেখে দেখে ফিরে যাক
সবটা পিপাসা,ও মুখেও তৃষ্ণা দূর হয়!
নাই দিলে সুখের পরশ,বিবাগ প্রনয়
যাক পুড়ে দুরন্ত রোদ্দুরে!
শোনাও গভীর আরো
কাছে দূরে কেন্দ্রীভূত সব
আমিওতো দেখি হেমসখা কতটা প্রনয়ে
ভালোবেসে দাগা দিলে ভিখারি অন্তর?
এ পাত্র পিয়াসে আজও খালি
স্বেদ বিন্দু সব দাও যতটা সম্ভব
আমি গ্রহ উপগ্রহ খাব।

আসলে, প্রেম তো কখনোও স্রেফ একরকম নয়,
তাহলে কেন এত আশা করি?
মেয়েটি আমাকেও ভালোবাসে,
আরেকটি ছেলেকেও ভালোবাসে।
যেখানে দুটি হৃদয় তার মধ্যে মিলে,
সেখানে কেমন করে খুঁজে পাবো আমি নিজেকে?

একটু একটু তার চোখে হাসি,
কখনো আমার জন্য, কখনো তার জন্য,
তার চোখের তারায়
যে কোন গ্রহের আলো!
অদৃশ্য দূরত্ব আর দ্বিধা, এই নিয়ে
হয়তো মরে যাওয়া ভালো

ভালোবাসা তো এক রঙের নয়,
কখনো সাদা, কখনো কালো,
অথবা, আকাশের মতো অদৃশ্য,
যে কখনো চুম্বন, কখনো ছেড়ে চলে যায়।
নিস্তব্ধ রাতে তার চোখে ঘোরে,
অদৃশ্য দুটি সাগরের তরঙ্গ,
একটি আমার দিকে, আরেকটি তার,
ভালোবাসার স্রোতে কি যে তোলপাড়!

যদি তাকে জিজ্ঞেস করি, উত্তর মেলেনা
সে চুপচাপ থাকে
প্রশ্নেরা হাওয়ায় হারিয়ে, মিশে যায়,
রাতের অন্ধকারে জেগে থাকি নীরবে, করুণ নিভৃতিতে

সে মেয়েটি আমাকেও ভালোবাসে,
আবার নতুন একটি ছেলেকেও ভালোবাসে।
একেকটি প্রেমের আয়ু শুধু ন-দশ বছর? আর আজ
দুটো হৃদয়, দুটি আশা, দুটি গল্প,
একই সময় তার পেছনে দৌড়ায়, কিন্তু কিছুই থামে না।

এক হাতে আমার হাত সে ছাড়বেনা বলে,
আরেক হাতে এক নতুন স্বপ্নের পথ ধরতে চায়।
সে পথ সরে গেলে সে কাঁদে।
তার চোখে, কিছুটা উদ্বেগ, কিছুটা গ্লানি
মনে মনে চিন্তা, এই ভীষণ দ্বিধা কখনোই সরবে কি?

আমি জানিনা, তার হৃদয়ে কি আমি আছি?
সে কি জানে, সেখানে যে আমি একা নই?
আবার সে কি বুঝে, তার ভালোবাসা
দুটি পথে বিভক্ত হয়ে চলে এ মেনে নেব কি করে

তবে আমি অপেক্ষা করি, তার সিদ্ধান্তের জন্য,
শুধু চাই, তার হৃদয়ের আসল দিক জানুক,
সে আমায় কি চায়, আমাকে কতটুকু ভালোবাসে,
এটুকু জানলেই হয়, বাকি সব অদৃশ্য।

সে মেয়েটি আমাকেও ভালোবাসে,
আবার নতুন একটি ছেলেকেও ভালোবাসে,
একই অনুভূতি, দুটি দিক,
না-বোঝা বোঝারা ভারি হয়ে ওঠে প্রতিদিন।