আজ-এর মানুষ

। আজ’ এর মানুষ ।
‘প্রতিদিন শেষের তারিখ, প্রতিদিন জন্মদিবস,
সেভাবেই মনে করা ভালো ।
যা লিখবেন, যা পড়বেন, যা করবেন,
যা বলবেন, সব আজ আর আজই।’
এই কথা বলে আরামে চায়ে চুমুক মারলেন তিনি।
আমি বললাম, ‘সে কি, তাহলে
গতকাল আর আগামীকালের কী হবে?’
পাশের লোকটির হাতে ধুমায়িত সিগারেটটার দিকে
তাকিয়ে তিনি উদাস ভাবে বললেন,
‘গতকাল হলো অতীত।
কিছুটা ধোঁয়ার সুখটান আর বাকিটুকু ছাই নিয়ে বাসা বেঁধে রয়েছে আজকের ফুসফুসে,
আর আগামী ওই দোকানের না খোলা সিগারেটের প্যাকেটগুলোর মতো,
আদৌ খাবেন বা খেতে পারবেন কিনা ,
কাল জানা যাবে।’
‘ওরে, দুনম্বর চা দিস! ‘
আমি হাঁক মারলাম,
‘আমারটা চিনি দুধ ছাড়া, আর আপনারটা? ‘
তিনি বললেন ‘ সবকিছু দিয়ে।
চায়ের এই ভাঁড়টা আপনার আজকে পাওয়া সেকেন্ড চান্স,
অতীতের কান ঘেঁষে হুশ করে চলে যাওয়া বলে
ডাক করে এখনো ক্রিজে আছেন,
এইবার ছক্কা মারতে যাবেন না ঠুকে খেলবেন,
আপনার ব্যাপার!’
বললাম, ‘ঠিকই বলেছেন, সুগার তিনশো ছুঁয়েছিলো।
তা আপনি তো সব দিয়েই,
তার মানে এখনো কিছু…’
তিনি মাঝপথে আমায় থামিয়ে হো হো করে হেসে বললেন,
‘ক’মাস আগেই কেমো শেষ হয়েছে,
ফুসফুস ঝাঁঝরা। আমার ঠুকঠুকে লাভ নেই,
ছক্কা মেরেই খেলি, তবে যা কিছু করি , রুল ভাঙি না কিন্তু,
মাঠ ছেড়ে যাবো না আউট না হয়ে!’
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম,
‘সে কি!
আপনাকে দেখলে তো..
তিনি আবার দোকান কাঁপানো হেসে বললেন,
‘আপনার আর আমার মধ্যে তফাৎ কি জানেন,
আমি জানি,
ইনিংস শিগগির শেষ,
আপনি জানেন না আউটের বলটা কবে আসবে।
চায়ের ভাঁড়ে চুমুক হোক বা সিগারেটে সুখটান,
যা করার আজকেই করে নিন মশাই,
লেখার হলে লিখুন, বলার হলে বলুন,
একটা সময়ের পরে তো চুপ থাকতেই হবে।’
দাম চুকাতে চুকাতে বললাম,
‘মশাইয়ের পরিচয়?’
তিনি আবার সেই হাসিটা হেসে বললেন,
আজকে আমার নাম ধনঞ্জয়,
কে বলতে পারে, কাল আমি আপনিই নয়?
ক্যালেন্ডারে আগামীকালটা আজ হয়ে গেলেই,
সেই মানুষটার কথা বড় মনে হয়!
আর্যতীর্থ
- আর্যতীর্থ-এর অন্যান্য কবিতাপাতা
- এই পাতাটির ক্লিকসংখ্যা 287
