বইয়ে পড়া গল্পের সাদা ঘোড়াটির মত
১৬২।
কতক্ষণে বৃষ্টি আসবে – অপেক্ষা করে ভিয়েতনামী পুতুলটা
পশ্চিমা বাতাস নাকি অনেক আগেই তাকে শুনিয়েছে
এক্কেবারে প্রথমে ঘরের জানালা দিয়ে ঢুকে কত অচেনা গন্ধ মেখেছিল সে
তারপর বৃষ্টি খুঁজেছিল প্রাণপণ, ড্রয়িং রুমের ওপাশ হতে পড়ার ঘরে
সব মুছেই ফিরে যেতে হবে
অচেনা গন্ধ সব - খুলে রাখা বইয়ের পাতার, ছেড়ে রাখা আদরের অন্তর্বাসে
বেড়াতে গিয়ে কিনে হাতে বানানো সুগন্ধী মোমবাতির, অল্প উত্তেজনার স্বেদবিন্দুর
সব ধুয়ে নিতে হব বৃষ্টির জলে, ফিরে যেতে হবে চেনা হয়ে
চেনা প্রিয়তম, চেনা রেডিয়োর গানে
ভিয়েতনামী পুতুলটা অবাক হয়ে ছোট চোখে প্রশ্ন করে
বৃষ্টির জলে কি কি ধোয়া যায় আর -
ধুয়ে ফেলা যায় কি দেশান্তরের স্মৃতি? স্মৃতির হাতবদল? ন্যাপথলিনের গন্ধ?
পশ্চিমা বাতাস নিশ্চুপে শোনে হাতে মেহেন্দী আঁকার গল্প
কপালের টিপের লেপটে যাওয়া
তোমাদের গায়ে কি বারুদের গন্ধ আছে?
নখের ফাঁকে রূপালি গুঁড়ো?
ধুয়ে নিয়ে চাই আমি, নতুন করে বসতে চাই রঙীন কাঁচে
বাতাস আরো কাছে সরে আসে, ঘিরে ধরে এখনো না মোছা গন্ধ
ভিয়েতনামী পুতুলটা বলে আরো কিছুটা মুক্তির গল্প শুনিয়ে যাও তাহলে --
১৬৩।
আমার চারিদিকে কোলাহল
প্রায়শঃই স্বপ্ন দেখি আমি কোলাহলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে
সরাসরি ঢুকে যাই বইয়ে পড়া গল্পের সাদা ঘোড়াটির মত একরাশ রঙীন ধোঁয়ায়
প্রতিবার সেই ধোঁয়া জ্বালাবে কে? কে দেবে রঙীন হবার উপাদান
তবুও তো ইচ্ছে করে প্রতিবার ধারণার কথা লিখে রাখি
পৃথিবী যদি গোলাকার না হত,
তাহলেও কি একবার চলে গেলে কাছে ফিরে আসার অপেক্ষায়
রাতের নক্ষত্র দেখবে বলে কিনত কি কেউ টেলিস্কোপ?
কিংবা সেই বইটিরই মাঝের পাতার ডলফিনটির মত
দিত কি কেউ নীল জল থেকে বহুদূরের ডাক?
প্রায়শঃই স্বপ্ন দেখি একদিন খালি পায়ে জ্বলন্ত কাঠকয়লার উপর দিয়ে হেঁটে যাব
সদ্যবিবাহিতের পাশের কাজল পরা অবাক চোখ দেখবে
তারই পায়ের মত আমার পায়েতেও ফুটেছে লাল রঙ
সেই আভায় ভরে যাবে সন্ধ্যে হয়ে আসা ঘর
আমি দেওয়াল জুড়ে ধারণার কথা লিখব
কখনো পেনসিলে, কখনোও রাজমিস্ত্রীর শেষ না করে যাওয়া টিনের কৌটো থেকে
তুলে নেব পবিত্র নিষ্পাপ রঙ
প্রায়শঃই স্বপ্ন দেখি আমার সমস্ত না বলা কথা
ভোরের বেলা কেউ কানের কাছে শুনিয়ে দেবে আধাঘুমে
মনে থাকবে শুধু আবার সব নতুন করে বলার কোলাহল
যার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাব আমি সেই গল্প বইয়ের
মাঝের পাতার ছেঁড়া বাঁধনটির মত
- সুকান্ত-এর অন্যান্য কবিতাপাতা
- এই পাতাটির ক্লিকসংখ্যা 389